কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগের অগ্রগতি জানতে চান হাইকোর্ট
১৪১টি কারা চিকিৎসকের শূন্য পদে চিকিৎসক আছে মাত্র চারজন
দেশের সব কারা হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সার্বিক পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। কারাগারে কীভাবে চিকিৎসক নিয়োগ হয়, কোন কর্তৃপক্ষ কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগ দেন, এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের অগ্রগতি কী, বর্তমানে কারাগারে কতজন চিকিৎসক আছেন, কার কী দায়িত্ব, নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যান কি না- এসব বিষয়ে আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে বলেছেন আদালত।
তিন বছর আগে করা এ-সংক্রান্ত এক রিটের সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) এ আদেশ দেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এদিন আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রিটকারী আইনজীবী জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম।
আইনজীবী জে আর খান রবিন জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৪১টি কারা চিকিৎসকের শূন্য পদে চিকিৎসক আছে মাত্র চারজন। যে কারণে শূন্য পদগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগে আদালতের আগের আদেশ বাস্তবায়নের অবস্থা জানানোর নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করি। আদালত আগের আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। আর এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে প্রতিবেদন দিতে মৌখিকভাবে আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে। আর কারা মহাপরিদর্শককে বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত চিকিৎসক নিয়োগ না হবে ততদিন যেন প্রেষণে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে। আদালতের বক্তব্য আমি এরই মধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে জানিয়ে নোট দিয়েছি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রেষণে কারা চিকিৎসক নিয়োগ দিত। এখন স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানায়। সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) অনুরোধ করে নন ক্যাডারের চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করে আদালতের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছি।
দেশের মোট ৬৮ কারাগারে ১৪১ চিকিৎসক পদের ১৩৭টিই খালি উল্লেখ করে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক কারা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি প্রায় ৮৩ হাজার। কিন্তু তাদের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন। ভিআইপি বন্দিরা কারাগারের বাইরে কিছু হাসপাতালে সেবা নিতে পারলেও সাধারণ বন্দিদের বেশিরভাগের ভাগ্যে চিকিৎসা জোটে না। এভাবে আরেক ধরনের ‘নির্যাতন’ বা ‘শাস্তি’ ভোগ করতে হচ্ছে তাদের। এতে অনেক সময় কয়েদির মৃত্যু হচ্ছে। আবার আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।
২০১৯ সালে রিটটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। তখন আদালত কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে কারাগারের চিকিৎসা ব্যবস্থা, চিকিৎসক নিয়োগসহ কারাগারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে কারাগারে ২৪ চিকিৎসক থাকার কথা জানায়। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। এরপর গত বছর ১৭ জানুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে জানায় ১৪১ পদের বিপরীতে ১২২ জন চিকিৎসক দেশের বিভিন্ন কারাগারে নিয়োজিত আছেন। ১২২ জনের মধ্যে ৭ জন কাজ করছেন। বাকি ১০৫ জন পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত হবেন। এরপর করোনা মহামারীর মধ্যে প্রেষণ বাতিল করে বেশ কিছু চিকিৎসককে তুলে নিলে পরে আর নিয়োগ হয়নি।