আজ ১২ নভেম্বর, বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান’ অর্থাৎ ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করে’। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৬৮ শিশু মারা যাচ্ছে। নিউমোনিয়া আক্রান্তদের মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি (হাইপক্সেমিয়া) একটি জটিল সমস্যা। রক্তের অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শিশুদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুমৃত্যু কমাতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে প্রতি বছর ৬০ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপক্সেমিয়ায় ভোগে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৪ জন নিউমোনিয়ার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২৮৬, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬, মার্চে ৩৩০, এপ্রিলে ২২৬, মে মাসে ২৫০, জুনে ২১৫, জুলাইয়ে ১৬৯, আগস্টে ১৮০, সেপ্টেম্বরে ১৭০, অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি ৩০৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।

এ ছাড়া চলতি মাসের ১০ দিনে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ৮৪ জন। এর আগের বছর নিউমোনিয়ার চিকিৎসা নিতে ২ হাজার ২২৭ শিশু এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তাদের তথ্যমতে, গত চার মাসে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এখন সারা দেশের হাসপাতালগুলোর শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী বাড়ছে। তিন মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার জানান, ডেঙ্গুর কারণে নিউমোনিয়া রোগী নিয়ে চিন্তা করার সময় পাচ্ছেন না তারা। ২০০ নিউমোনিয়া রোগীর চিকিৎসা ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে করা যায়। কিন্তু ২০০ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে করা যায় না। তাই ডেঙ্গু সামাল দিতে গিয়ে নিউমোনিয়ায় নজর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর-কাশি, শ্বাসের সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। সাধারণত শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। তাই মায়েদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।