বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ
বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস
আজ ১২ নভেম্বর, বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বেই এই রোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। প্রাণঘাতী এ রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০১০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর আশংকা বেশি থাকে। বিশ্বে প্রতি ২০ সেকেন্ডে ১ জন শিশু রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখ। বাংলাদেশেও প্রতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
নিউমোনিয়া প্রাণঘাতী হলেও নিরাময়যোগ্য রোগ। শীতের সময় শিশু ও বয়স্কদের এ রোগের প্রকোপ বাড়ে বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, নিউমোনিয়া হচ্ছে- ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিল রোগ। এটি ফুসফুসের প্রচলিত ও প্রাচীন একটি রোগ। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিপোক্রেটস প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে রোগটির বর্ণনা দিয়েছেন।
সংক্রমণকারী জীবাণুর ওপর ভিত্তি করে নিউমোনিয়াকে ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল, ফাঙ্গাল, পরিবেশগত, কমিউনিটি অর্জিত, হাসপাতালে অর্জিত, স্বাস্থ্যসেবাযুক্ত, শরীর সম্পর্কিত ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ফুসফুসে নিউমোনিয়া জীবাণুর প্রবেশ কয়েকভাবে হতে পারে। সাধারণত এসপিরেশান, শ্বাসগ্রহণ বা শ্বসন, রক্ত, সরাসরি বিস্তার, জীবাণুর ক্ষতি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, ধূমপান, মদপান, অ্যাজমা, সিওপিডি, ডায়াবেটিস, কিডনি ফেইলিওর, কেমোথেরাপি, স্ট্রোক, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন ইত্যাদি নিউমোনিয়ার উৎপত্তিতে ভূমিকা রাখে।
সাধারণত প্রিম্যাচিউর বা অকালজাত, ওজন কম নবজাতক, জন্মের পর শালদুধ ও প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ না খাওয়ানো শিশু, অপুষ্টিজনিত ও ভিটামিনের অভাবে ভোগা শিশু, ঘিঞ্জি, অস্বাস্থ্যকর, আলো-বাতাসহীন, ধূমপায়ী পরিবেশে থাকা লোকেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলো বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা এবং কী ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তার ওপর।
কারো নিউমোনিয়া হয়েছে কি না এর লক্ষণ দুই-তিন দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। যেমন—কাশি, বুকে ব্যথা, শ্লেষ্মা, রক্তকাশি, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, শ্বাসের গতি মিনিটে ২৪ বা বেশি, ঠোঁট ও জিহ্বা নীল হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এই রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে শ্লেষ্মা/কফ পরীক্ষা, বুকের সিটিস্ক্যান, ব্রংকোসকপি ইত্যাদি পরীক্ষা করে জানা যায়। নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার।
নিউমোনিয়া হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দায়ী, সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হলে এবং আগেভাগে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নিউমোনিয়াকে বহুলাংশেই প্রতিরোধ করা যায়।
মনে রাখতে হবে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয় প্রকারের ধূমপান নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। পরোক্ষ ধূমপানে বিশেষ করে শিশুদের সমস্যা বাড়ে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে শিশুকে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস রপ্ত করাতে হবে। এতে অন্য অনেক অসুখ-বিসুখ থেকেও শিশু রক্ষা পায়।