আদালতের অনুমতি ছাড়া ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টা মামলায় জেরার সময় ভুক্তভোগীকে তাঁর চরিত্র ও অতীত যৌন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না- এমন বিধান যুক্ত করে ঔপনিবেশিক আমলের সাক্ষ্য আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এ ছাড়া বিচার কাজে বিভিন্ন ডিজিটাল তথ্যকেও সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ এই আইনে যোগ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট ১৮৭২ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২২’ সংসদে তুললে কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।

বিরোধী দলের বেশিরভাগ সদস্য আইন পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংশোধন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তবে এর কোনো কোনো ধারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

সংশোধনী পাস হওয়ার ফলে বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিল হবে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন ধর্ষণ কিংবা শ্নীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।

বিলে ক্রস এগজামিনেশন বা জেরার সময় প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টা মামলার ভিকটিমকে তার নৈতিক চরিত্র বা অতীত যৌন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে যদি আদালত মনে করেন এ ধরনের প্রশ্ন করা প্রয়োজন, তাহলে আদালতের অনুমতি নিয়েই কেবল তা করা যাবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইনের একটি ধারা ছিল নারীদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। তা সংশোধন করা হচ্ছে, যা নারীদের জন্য সম্মানজনক, দেশের জন্য সম্মানজনক।

মিথ্যা অভিযোগে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগে মামলা হতে পারে। কিন্তু কেউ এভাবে মামলা করলে আইনে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করারও সুযোগ আছে। এখন আইনের মাধ্যমেই দেশ চলছে।

এ ছাড়া সাক্ষ্য আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধন ও নতুন ধারা যুক্ত করে মামলার বিচারে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনেরও সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ যাতে ভুয়া বা জাল সাক্ষ্য-প্রমাণ ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির করতে না পারে, আদালত যদি মনে করেন যে কোথাও আপত্তিজনক কিছু আছে অথবা কেউ যদি আপত্তি তোলে, তাহলে ওই সাক্ষ্য-প্রমাণের ফরেনসিক পরীক্ষা করা যাবে।

এ আইন পাসের আলোচনায় বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, আইনের খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আইন কার হাতে থাকবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হয় প্রতিপক্ষ দমনে। শুধু তা-ই নয়, এটি ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ফেসবুকারদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডেটা সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে, এটি মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত করবে।