ডা. বুলবুল হত্যা মামলার চার্জশিটে যা বলা হয়েছে
ডা. আহমেদ মাহি বুলবুল
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গরিবের চিকিৎসক খ্যাত ডা. আহমেদ মাহি বুলবুলকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারায় চার্জশিট দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার চার্জশিটে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিানটের দিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন এলাকায় চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুলের রিকশা গতিরোধ করে সঙ্গে থাকা সবকিছু দিয়ে দিতে বলেন ছিনতাইকারীরা। সে সময় মোবাইলফোন দিতে না চাওয়ায় ডা. বুলবুলের উরুতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন ছিনতাইকারীরা। এরপর নোকিয়া ব্রান্ডের স্মার্টফোন নিয়ে পালিয়ে যান ছিনতাইকারীরা। পরে পথচারীরা আহত অবস্থায় ডা. বুলবুলকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গরিবের চিকিৎসক খ্যাত ডা. বুলবুলকে হত্যা করে ছিনিয়ে নেওয়া স্মার্টফোনের জন্য চার ছিনতাইকারী পেয়েছেন মাত্র ১৫শ টাকা। এই টাকা দেন তাদের দলনেতা রায়হান।
চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন- ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন (২৭), সদস্য রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), আরিয়ান খান হৃদয় (২৩), সোলায়মান (২৩) ও রিপন।
২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। এ ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর থানায় তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
বুলবুল হত্যা মামলার তদন্তে যা উঠে এসেছে :
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেন, ‘মামলার ভিকটিমের স্বামী বুলবুল আহমেদ (৩৯) দন্ত চিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। তিনি ঠিকাদারী কাজের জন্য ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিানটের দিকে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হয়ে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য রিকশাযোগে রওনা হন।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুর মডেল থানার পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার শোরুমের সামনে মেইন রাস্তার ওপর পৌঁছালে মামলার আসামি রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করে বুলবুল আহমেদকে যা যা আছে দিয়ে দিতে বলেন। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখান। বুলবুল আহমেদ মোবাইলফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার উরুতে আঘাত করে রক্তাকৃত জখম করেন এবং মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যান। বুলবুল আহমেদ গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলার ঘটনায় (ছিনতাইয়ে) ব্যবহৃত ছুরিটি রিপন ও আরিয়ান ভাঙা বাড়িতে ইটের খোঁয়ার নিচে রাখেন। মামলার তদন্তে রায়হান, রাসেল, হাফিজুর, সোলাইমান ও রিপনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারা মতে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’
বুলবুলকে যা যা আছে দিয়ে দিতে বলেন ছিনতাইকারীরা :
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, ‘মামলার আসামি রায়হান, রাসেল, হাফিজুর, সোলাইমান ও রিপন আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিদের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা ডাকাত দলের সদস্য। তারা ২০২২ সালের ২৬ মার্চ রাত ১১টার দিকে কাঁঠালতলা ভাঙাবাড়িতে মিলিত হন। রাত ২টা পর্যন্ত পরামর্শ করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হন। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে মামলার ঘটনাস্থলে আসেন। মামলার ভিকটিম বুলবুল আহম্মেদ নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হয়ে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রিকশাযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আসামি রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করে বুলবুলকে যা যা আছে দিয়ে দিতে বলেন। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখান। তখন আসামি সোলাইমান ও হাফিজুর এক সঙ্গেই ছিলেন। বুলবুল মোবাইলফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার উরুতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর আসামিরা সকালে কাঁঠালতলার ভাঙাবাড়িতে একত্রিত হন। আসামি রিপন ফোন করে রায়হানকে ডেকে আনেন। রায়হান রিপনকে ১৫শ টাকা দিলে সবাই ভাগাভাগি করে নেন। রায়হান দলের নেতা, ডাকাতির মামলামাল তার কাছে জমা হয়। রায়হান ডাকাতির সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান করে পুলিশ আসে কি না তা দেখাশুনা করেন।’
পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে শাস্তি :
যদি মিলিতভাবে ডাকাতি করার সময় পাঁচ বা ততধিক ব্যক্তির যে কোনো একজন ডাকাতিকালে খুন করে, তবে তাদের প্রত্যেকে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজীবন কারাদণ্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩৯৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত হয় সেদিকে রাষ্ট্রপক্ষ নজর রাখবে। এই মামলার কোনো আসামিকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র : জাগো নিউজ।