স্থূলতাজনিত বন্ধ্যাত্বের শিকার রাজশাহীর ৫৬ শতাংশ নারী
স্থুল নারী
বেশি ওজন ও স্থূলতার কারণে বন্ধ্যত্বের শিকার হচ্ছেন রাজশাহীর ৫৬ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ একটানা দুই বছর বা ২৪ মাসের বেশি সময় ধরে গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার করেছেন।
সম্প্রতি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম মন্ডলের তত্ত্বাবধানে বিভাগের একদল শিক্ষার্থী এ গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
বন্ধ্যত্বের সেবা দেওয়া রাজশাহীর বিভিন্ন হেলথ্ সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা ৪৫০ নারীর বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পেয়েছেন গবেষক দল।
ফ্যাক্টরস অ্যাসেসিয়েটেড উইথ ইনফার্টিলিটি অ্যামং ম্যারিড উইমেন ইন রাজশাহী সিটি শিরোনামের গবেষণাটি সম্প্রতি জার্নাল অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
নারীদের বন্ধ্যত্বের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে— বয়স, প্রথম বিবাহের বয়স, গর্ভনিরোধক ব্যবহারের সময়কাল, স্বামীর ডায়াবেটিস এবং মাদকাসক্তি। ৩০ বছরের কিছু কম বা সমান বয়সী নারীদের মধ্যে বন্ধ্যত্বের বেশি আক্রান্তের নমুনা পেয়েছেন গবেষক দল। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ওজন ও স্থূল নারীরা কম ওজনের নারীদের চেয়ে ২ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি বন্ধ্যত্বের শিকার হচ্ছেন।
সাত মাসের বেশি বা সমান সময় যারা গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার করছেন, তাদের চেয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে যেসব নারী গর্ভনিরোধক ব্যবহার করছেন, তাদের বন্ধ্যত্ব হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি। স্বামী মাদকাসক্ত হলে বন্ধ্যত্ব হওয়ার ঝুঁকি ৫ দশমিক ৫১ গুণ বেশি।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ নারী গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। ৬২ শতাংশ নারীর বয়স ২০ বছর থেকে ২৯ বছরের মধ্যে এবং ২৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারীদের বয়স ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে। গর্ভনিরোধক ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বামীদের বয়স বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে গর্ভনিরোধক ব্যবহারকারী ৬৮ শতাংশ নারীর স্বামীর বয়স ৩০ বছরের বেশি। এ ছাড়া বন্ধ্যত্বের জন্য সেবা নেওয়া ৬৮ শতাংশ নারীর স্বামীর বয়স ৩০ বছরের বেশি এবং মাত্র ৩ দশমিক ১১ শতাংশ নারীর বয়স ২৫ বছরের কম।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, স্বামীদের বয়স বিবেচনা করলে অধিকাংশ নারীর অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে।
যেখানে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ নারীর ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে। প্রায় ৪৭ শতাংশ নারীর স্বামীর বিয়ের সময় বয়স ছিল ২৫ বছরের কম এবং ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর বিয়ের সময় তাদের স্বামীর বয়স ছিল ২৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ নারী বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগছেন যাদের বয়স ২০ বছরের কম এবং ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী বন্ধ্যত্বে ভুগছেন যাদের স্বামীর বয়স ২৫ থেকে ২৯ বছর। বন্ধ্যত্বের শিকার নারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশরই স্বামী ডায়াবেটিকসে ভুগছেন এবং ১১ শতাংশ মাদকাসক্ত।
অন্যদিকে গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহের ওই এলাকার শিক্ষার হার প্রায় ৪৩ শতাংশ এবং ৬০ দশমিক ৩৬ শতাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টারে সেবা নেওয়া কিছু নারীদের বয়স ১৫-৪৪ বছরের মধ্য এবং তারা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ওই সেবা কেন্দ্রে গেছেন।
গবেষকরা সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদের এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেছেন, একই সঙ্গে সরকার ও এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থাকে বন্ধ্যত্ব সমস্যায় চিহ্নিত কারণগুলো কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠিয়েছেন।
গবেষণা দলের প্রধান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউমান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, দীর্ঘদিন স্থুলতা থাকা ও নারীদের ওজন বেশি থাকার ফলে গর্ভধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভনিরোধক ব্যবহার করার কারণেও গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে; এভাবে কমতে থাকলে আমাদের দেশে বন্ধ্যত্বের হার বেড়ে যেতে পারে।