উপজেলা হাসপাতাল আবার ১০ শয্যার হয় নাকি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
2022-10-10 15:48:10
উপজেলা হাসপাতাল আবার ১০ শয্যার হয় নাকি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দপ্তরের নতুন ভবন ও বঙ্গবন্ধুর মোড়াল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

উপজেলা এখনও ১০ শয্যার হাসপাতাল আছে- এই তথ্য জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি ১০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালগুলোকে অবিলম্বে ৩১ শয্যায় উন্নতি করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দপ্তরের নতুন ভবন ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করতে গিয়ে এ নির্দেশনা দেন তিনি।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু উপজেলা হাসপাতাল আছে ১০ বেডের, যেটা আমাদের জানাই ছিল না! উপজেলা হাসপাতাল আবার ১০ শয্যার হয় নাকি! এখন তো উপজেলা হাসপাতাল ৫০ শয্যার এবং কোনো কোনো হাসপাতাল ১০০ শয্যার হয়ে গেছে। অতি দ্রুত প্রত্যেকটি ১০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালকে ৩১ শয্যায় উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছি। এটা হয়ে যাবে ইন-শা-আল্লাহ।’


জাহিদ মালেক বলেন, আজকে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ অনেক দূর এগিয়েছে।  আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা শুরু মাঠ, গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে। করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য আমরা ভ্যাকসিনে হিরো হয়েছি। গড় আয়ু ৭৩ বছর হয়েছে। ভালো সেবা, পুষ্টি ও সামাজিক ব্যবস্থার কারণেই ৫০ বছর থেকে গড় আয়ু ৭৩ বছর উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি গড় আয়ও বেড়েছে।’


জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক থেকে আশেপাশের দেশের তুলনায় আমরা এগিয়ে আছি। আমাদের অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি হাসপাতালের উন্নয়ন হয়েছে। করোনার সময় চট্টগ্রাম বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আমরা সকলকে নিয়েই করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছি, এটা আমাদের বিরাট অর্জন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ব প্রশংসা করে বাংলাদেশের। করোনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি নতুন পরিচয় হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে ভালো রয়েছে। আমাদের ১২ বছরের উপরে বয়সীদের ৯৮ শতাংশ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই অর্জনের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। দেশে অসংখ্য রোগ ব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে। দেশে মাদকের হারও বেড়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’


অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম দুর্গম এলাকা। এখানে অনেক পাহাড়ি অঞ্চল আছে। সুতরাং আপনাদের এখানে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হলে কষ্ট করতে হবে।’


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শয্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা আটটি নতুন হাসপাতাল স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছি। চট্টগ্রামেও কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের চিকিৎসা হবে। বার্ন ইনস্টিটিউটের একটা ইউনিট এখানে স্থাপিত হচ্ছে। আমরা অবকাঠামো, জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতিসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছি। কিন্তু  চ্যালেঞ্জ হলো, এগুলোর সঠিক ব্যবহার করা এবং মানুষের প্রয়োজনে সেবা দেওয়া। মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করার ক্ষেত্রে একটু গ্যাপ আছে। এই গ্যাপগুলো দূর করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন করা। ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মেশিনগুলো চালু রাখতে হবে।’


তিনি বলেন, ‘আমরা এমনও উপজেলা দেখেছি, যেখানে আল্ট্রাসনো ও এক্সরে করার মেশিন নেই। থাকলেও চালু নেই। এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। যথেষ্ট জনবল দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছরে ১২ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের শয্যা অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও সার্ভিসের কেনো উন্নতি হবে না?

জাহিদ মালেক বলেন, সার্ভিসের উন্নতি না হলে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি দায়ী থাকবেন। যে কাজ পারবে না, সে লিডার হওয়ার উপযুক্ত নয়। তাকে কাজ ছেড়ে দিতে হবে। কারণ আমরা জনগণের স্বাস্থ্য সেবার উন্নত করতে চাই। তবে আপনারা কাজ পারেন, তা করোনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘একটা সার্ভিস দিতে হলে সব কিছু ঠিক থাকতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণ হবে, আবার বছরের পর বছর পরে থাকবে, এটা হতে পারে না। জনগণের টাকায় নির্মাণ হওয়া অবকাঠামো জনগণেরই কাজে আসবে না, এটা মেনে নিতে পারছি না। যে অবকাঠামোগুলো তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত করে জনবল দিয়ে চালু করতে হবে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে অনেক ভবনের নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে চলছে। এগুলোকে দ্রুত সমাপ্ত করে হস্তান্তর করে দিবেন। যাতে এখানের কার্যক্রম খুব দ্রুত গতিতে শুরু হয়ে যায়।’ 


আরও দেখুন: