সেবার ঘাটতি নেই জকিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
সহকর্মীদের সঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম আব্দুল আহাদ
চিকিৎসক স্বল্পতা সত্ত্বেও এমবিবিএস চিকিৎসক কর্তৃক সেবা পাচ্ছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে আসা রোগীরা। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত এই উপজেলা হাসপাতালটিতে নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দায়িত্বরত এমবিবিএস চিকিৎসকেরাই সব ধরনের রোগীদের সাধ্যমত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডক্টর টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম আব্দুল আহাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডক্টর টিভির সিনিয়র প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন। পাঠকদের জন্য কথামালার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
ডক্টর টিভি : আপনার উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কিছু বলুন
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : সিলেট জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী সীমান্তবর্তী উপজেলা। প্রায় তিন লক্ষ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৩১ শয্যা বিশিষ্ট একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , দুইটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে এবং ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব ধরনের জরুরী সেবা বিদ্যমান। সেজন্য জরুরি বিভাগ, বহিঃবিভাগ, অন্তঃবিভাগ সমূহে সব সময় রোগীর চাপ অনেক বেশি। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রত্যেক দিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। যদিও এখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তবুও দায়িত্বগত চিকিৎসকরা উনাদের সর্বজ্ঞান দিয়ে সব ধরনের রোগীদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
ডক্টর টিভি : আপনি দায়িত্ব নেওয়ার নতুন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : আমি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যোগদান করি। এরপর আমার প্রথম চেলেঞ্জ ছিল করোনা প্রতিরোধে উপজেলার জনগণকে করোনা টিকার আওতায় নিয়ে আসা। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়েছি।
চিকিৎসক স্বল্পতা স্বত্বেও জরুরী বিভাগে এমবিবিএস চিকিৎসক কর্তৃক সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জোরদারকরন এবং সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরীর চেষ্টা করেছি।
স্মরণকালের ভয়াবহ দু-দুবারের বন্যায় হাসপাতাল কর্তৃক গঠিত দশটি মেডিকেল টিম বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা দুর্গতদের সবসময় চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
টিবি রোগীর সর্বাধুনিক রোগ নির্ণয়ে জিন এক্সপার্ট মেশিনের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
উপজেলার মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হ্রাসে ইউনিসেফের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে হাসপাতালে প্রসবকৃত ডেলিভারী রোগীদের জন্য উপহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জরুরী বিভাগের সামনে থেকে যানজট নিরসনে উপজেলা পরিষদের সাথে সমন্বয় করে পার্কিংয়ের জন্য সমতল জায়গায় মাটি ভরাট এবং উপজেলায় আগত রোগীদের বিশুদ্ধ পানির জন্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে একটি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডক্টর টিভি : এই এলাকার স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে কোন কোন বিষয় বিশেষ জরুরি?
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : হাসপাতালের প্রত্যেকটি বিভাগকেই সচল রাখা দরকার। যেমন ল্যাব, অপারেশন থিয়েটার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদায়ন এবং সর্বোপরি সেবা গ্রহীতা এবং সেবাদাতা উভয়ের ইতিবাচক মানসিকতা জরুরি।
ডক্টর টিভি : সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এই এলাকার মানুষের মনোভাব কেমন?
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে সব সময় সেবা গ্রহীতার চাহিদা অনুসারে সন্তুষ্টি সমানভাবে ধরে রাখা যায় না।
ডক্টর টিভি : আপনার হাসপাতালে কতটি পদ রয়েছে, এর মধ্যে পদ খালি আছে কতটুকু? শূন্যপদের চিকিৎসকদের অভাব কিভাবে পূরণ করছেন
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : ৩১ শয্যাবৃত্ত হাসপাতালের পদ সংখ্যা ১৪৭টি তার মধ্যে
খালি আছে ৫৫টি ( ৩৭ % )।
ডক্টর টিভি : আপনার হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী ও কুকুরে কামড়ানো রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ সুবিধা কেমন?
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : সাপে কাটা এবং কুকুরের কামড় দিয়ে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেই এবং সরবরাহ থাকা সাপেক্ষে এন্টিভেনম এবং রেভিস ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি।
ডক্টর টিভি : আপনার হাসপাতালে কোন রোগী বেশী আসে
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : সব ধরনের রোগীরাই আসে তবে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, পেটে ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্টের রোগী।
ডক্টর টিভি : দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনও কোনো ধরনের প্রতিকূলতার সম্মূখীন হয়েছেন কিনা? হয়ে থাকলে কীভাবে তা মোকাবেলা করেছেন?
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : অবশ্যই সবচেয়ে বেশি প্রতিকূলতা যেটি আমাদের সব সময় ফেস করতে হয়- তা হলো নিরাপত্তাহীনতা। সাধারণ জনগণকে সেবা দিতে গিয়ে আমার চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কতিপয় জনগণের আক্রোশের, খারাপ মন্তব্যের এমনকি ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ ধাক্কা দিয়েও চলে যায়। আমরা মানবিকতা ও রোগীর মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেক সময় সমন্বয় করে চলি। তবে হ্যাঁ স্থানীয় প্রশাসন আমাদের এরকম জরুরি সমস্যার সব সময় খুবই আন্তরিকতার সহিত আমাদের সাথে থাকেন।
ডক্টর টিভি : দেশের চিকিৎসকদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : সবাই যেন সবার পেশাগত জীবনের কিছুটা সময় অন্ততঃ গ্রামের নিপীড়িত অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে নিজের মানবীয় উন্নত জ্ঞানের ব্যবহার করেন। কারণ গ্রামের মানুষ এখনো সুন্দর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে অনেক দূরে।
ডক্টর টিভি : আপনার জন্ম বেড়ে ওঠা, পরিবার, শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই
ডা. এস এম আব্দুল আহাদ : আমার জন্ম সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নগর গ্রামে। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, এমসি কলেজ এমনকি কিছু সময়ের জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি। এরপর আমি সিলেট জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হতে ২০১৩ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। তারপর ২০১৪ সালে ৩৩ তম বিশেষ স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিবাহিত। দুজন কন্যা সন্তানের জনক। আমার সহধর্মিনীও একজন চিকিৎসক।