চরম দুর্যোগেও থামেনি বিশ্বনাথ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও থামেনি বিশ্বনাথ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সিলেটের প্রত্যন্ত বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এমনকি গত জুন মাসের সেই ভয়াবহ বন্যার মধ্যেও সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান স্বাভাবিক রেখেছি। ডক্টর টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটা জানিয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডক্টর টিভির সিনিয়র প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন। পাঠকদের জন্য কথামালার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
ডক্টর টিভি : আপনার উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কিছু বলুন
ডা. আব্দুর রহমান : বিশ্বনাথ উপজেলার জনগনকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে ১টি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের রয়েছে ৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র। যা উপজেলার ২,৭৪,৭১৫ জন জনগনের জন্য অপ্রতুল। অত্র উপজেলায় কোন বেসরকারি হাসপাতাল/ ক্লিনিক না থাকায় সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা, শিশু স্বাস্থ্য সেবা, গর্ভবতী ও প্রসূতি সেবার জন্য সরকারি স্বাস্থ্য সেবার উপর জনগণ শতভাগ নির্ভরশীল ।
ডক্টর টিভি : আপনি দায়িত্ব নেওয়ার নতুন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ডা. আব্দুর রহমান : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বহিঃবিভাগ সেবাকে সুশৃঙ্খল ও সেবা প্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব করেছি। এজন্য বহিঃবিভাগকে নতুন বিল্ডিংয়ে স্থানান্তর করেছি। মহিলা, পুরুষ, শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পৃথক রুমে সেবা গ্রহনের ব্যবস্থা করেছি। আইএমসি কর্নার, এএনসি কর্নার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু করেছি। এনসিডি কর্নার চালু করেছি যেখানে আজ পর্যন্ত ৬৩৬৫০ জনকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। নতুনভাবে ডেলিভারি রুম সুসজ্জিত করা হয়েছে। ১টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী ও প্রসূতি চেকআপ সহ ডেলিভারি সেবা চালু করা হয়েছে। বিশ্বনাথ উপজেলায় মাসিক প্রায় ৮২% জন্ম এবং ৪৫% মৃত্যূ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মাধ্যমে নিবন্ধিত হচ্ছে।
ডক্টর টিভি : এই এলাকার স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে কোন কোন বিষয় বিশেষ জরুরি?
ডা. আব্দুর রহমান : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রান্তিক ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত। এ কারণে সেবা গ্রহীতাদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় ও যানবাহনে চড়ে বাড়তি খরচ করে সেবা নিতে আসতে হয়। স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে বিদ্যমান ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক, মিডওয়াইফ, স্যাকমো, ফার্মাসিষ্ট ও সহায়ক কর্মচারী নিয়োগের সাথে সাথে ভৌত অবকাঠামো সংস্কার, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্মাণ এবং আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা প্রয়োজন।
ডক্টর টিভি : সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এই এলাকার মানুষের মনোভাব কেমন?
ডা. আব্দুর রহমান : বহিঃবিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও প্রসূতিসেবা গ্রহীতার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রমাণ করছে, জনগনের মনোভাব ইতিবাচক। এছাড়া কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে জনগনের চাহিদা-প্রাপ্যতা এবং আমাদের সীমাবদ্ধতা বুঝাতে সক্ষম হলে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি হবে।
এখানে একটা বিষয় বলতে চাই, গত জুনে সিলেট অঞ্চলের প্রলয়ঙ্করী বন্যার সময় সার্বক্ষনিক কর্মস্থলে উপস্থিত থেকেছি। সে সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় ২০০০ মানুষের সপ্তাহব্যাপী দুই বেলা খাদ্যের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাদের কয়েকশত গবাদিপশুকে হাসপাতাল আঙিনায় আশ্রয় প্রদান করি। সে সময় উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মিলিত সহযোগিতায় প্রত্যেক ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ক্ষেত্র বিশেষে বাড়ী বাড়ী সার্চিং করে মেডিকেল টিমের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। সেইসাথে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন সরবরাহের ব্যবস্থা করি। আমাদের মানবিক কাজের প্রতিদান হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের উপর আগের চাইতে আরও বেশি আস্থা বেড়েছে উপজেলাবাসীর।
ডক্টর টিভি : আপনার হাসপাতালে কতটি পদ রয়েছে, এর মধ্যে পদ খালি আছে কতটুকু? শূন্যপদের চিকিৎসকদের অভাব কিভাবে পূরণ করছেন?
ডা. আব্দুর রহমান : মোট ১৪১ পদের মধ্যে ৪৩টি (৩০.৫%) পদ শূন্য রয়েছে। সার্জারী ও গাইনী কনসালটেন্ট এবং ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল অফিসারের কোন পদ শূন্য না থাকলেও সহায়ক কর্মচারী সংকটের কারণে টিম হিসেবে জনগনকে অধিকতর ভাল সেবা দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে।
ডক্টর টিভি : আপনার হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী ও কুকুরে কামড়ানো রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ সুবিধা কেমন?
ডা. আব্দুর রহমান : সাপে কাটা ও কুকুড়ে কামড়ানোর প্রাথমিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। যদিও কুকুরে কামড়ানোর এন্টি রেবিস ভ্যাকসিন শুধুমাত্র জেলা সদর হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়।
ডক্টর টিভি : আপনার হাসপাতালে কোন রোগী বেশি আসে?
ডা. আব্দুর রহমান : শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী, শিশুর নিওমোনিয়া, ত্বকের রোগ, ডায়রিয়ার রোগী বেশি আসে।