সুপার স্পেশালাইজডে সাধ্যের মধ্যে সব চিকিৎসা
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন
বাংলাদেশে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চালু হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হাসপাতালটি চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেবার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ডক্টর টিভির প্রতিবেদক ইকরাম সালিহকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন।
ডক্টর টিভি: কেন আমরা এই হাসপাতালকে সুপার স্পেশালাইজড বলছি?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: অনেক দিন ধরেই আমরা বিশ্বমানের একটি হাসপাতালের অভাব অনুভব করছিলাম। বিশেষ করে দেশীয় স্বাস্থ্যখাতে। এরপরই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কাজ শুরু হয়। আমাদের দেশ থেকে বহুসংখ্যক মানুষ প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে যান। অথচ এসব রোগের চিকিৎসা আমাদের চিকিৎসকরাই করতে সক্ষম। এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটিকে বিশ্বমানের হাসপাতালে পরিণত করতে কাজ করব।
ডক্টর টিভি: এখানে রোগীরা কি ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবেন?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে পাঁচটি সেন্টারে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে থাকবে এক্সিডেন্টাল ইমারজেন্সি, অটিজম সেন্টার, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থাও থাকবে। ক্যান্সার সম্পর্কিত হেমাটোলজি বিভাগের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য যেসব রোগের কারণে মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান, সেসব নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
ডক্টর টিভি: এই হাসপাতালের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার হার কতটা কমানো সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করেন?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা চিকিৎসা বাবদ বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, এই অর্থ সাশ্রয় করতে সমর্থ হব। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সূচকে আমরা বৈশ্বিকভাবে এগিয়ে আছি। এই মুহূর্তে দেশ থেকে হরহামেশায় লোকজন চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাবে, তা আমরা মোটেও প্রত্যাশা করি না। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য দক্ষ। আমরা আশা করি, পারব ইনশাআল্লাহ।
ডক্টর টিভি: সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে গবেষণার সুযোগ থাকবে কি?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: চিকিৎসা ব্যবস্থায় অবশ্যই গবেষণা থাকতে হবে। বিএসএমএমইউয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখানে গবেষণা পরিচালনা করতে পারবেন। তবে আমাদের জোর থাকবে সেবায়।
ডক্টর টিভি: এই হাসপাতালে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেবাগ্রহণ কি সম্ভব হবে?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: সাধারণ মানুষ সহজেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। আর খরচ সবার সাধ্যের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করছি।
ডক্টর টিভি: চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে কিছু বলবেন।
আব্দুল্লাহ আল হারুন: প্রশিক্ষণের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। এখানে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। চিকিৎসক-নার্সসহ সবাই ভালো পারদর্শী, আত্মবিশ্বাসী। দক্ষিণ কোরিয়াতে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের চারটি গ্রুপ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পঞ্চম গ্রুপ এখন কোরিয়াতে প্রশিক্ষণে আছে। এছাড়া দেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা পেপারলেস পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা দেওয়া বিষয়ে অগ্রসর হচ্ছি।
ডক্টর টিভি: স্বাস্থ্যসেবায় রোবট ব্যবহারের পদক্ষেপ কেমন হবে?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: স্বাস্থ্যখাতে আমরা রোবট ব্যবহার করব। রোবটিক বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন। অচিরেই চিকিৎসাসেবায় রোবটের সাহায্য নিতে পারব।
ডক্টর টিভি: হাসপাতালটি কবে নাগাদ পরিপূর্ণভাবে কার্যক্রমে যাবে?
আব্দুল্লাহ আল হারুন: উদ্বোধনের পরে কিছু কাজ থেকে। সেগুলো চলছে। জনবল নিয়োগ, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, চিকিৎসকদের পদায়ন বিষয়ে কাজ অনেক এগিয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে হাসপাতালে পুরোপুরি চিকিৎসাসেবা চালু হবে।
ডক্টর টিভি: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য ডক্টর টিভির পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আব্দুল্লাহ আল হারুন: আপনাকে ও ডক্টর টিভিকে ধন্যবাদ।