‘সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ স্বাস্থ্যসেবার মানকে চমৎকারভাবে বদলে দিতে পারে’
নওগাঁর সাহাপার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাঃ রুহুল আমিন
সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ স্বাস্থ্যসেবার মানকে চমৎকারভাবে বদলে দিতে পারে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন নওগাঁর সাহাপার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাঃ রুহুল আমিন। ডক্টর টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও আলোকিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাপাহার। সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছেন সিনিয়র প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন। পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশটি তুলে ধরা হলো।
ডক্টর টিভি : আপনার উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কিছু বলুন
ডা. মুহাঃ রুহুল আমিন : রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিমি দূরে ভারত সীমান্ত ঘেঁষে ছোট্ট উপজেলা শহর সাপাহার। বরেন্দ্র রুক্ষ পরিবেশ এবং পানির অভাব এই এলাকার নিত্যসঙ্গী। ব্যাপক সীমাবদ্ধতাকে পাশে রেখে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে সাপাহার স্বাস্থ্য বিভাগ। দৃষ্টিনন্দন পরিচ্ছন্ন হাসপাতাল এবং অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবহার এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মানকে অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছে।
ডক্টর টিভি : দায়িত্ব নেওয়ার নতুন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ডা. মুহাঃ রুহুল আমিন : ২০১৮ সালের আগস্টে সাপাহারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পরই বদলে যাওয়ার সূচনা করি । মূলত: ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এবং টিম কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকি।
১. সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরী,
২. অচল, অর্ধসচল যন্ত্রপাতি ও লজিস্টিক্সের সুষ্ঠু ব্যবহার,
৩. মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার।
পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হাসপাতালসহ পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিটি অংশকে পরিস্কার করা হয়েছে। ময়লার জায়গাগুলোকে সংস্কার করে ৪ টি ফুলবাগান তৈরী করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বাতিল জিনিসপত্রকে কাজে লাগিয়ে স্থাপন করা হয়েছে নান্দনিক থিম পার্ক। প্রায় ৩০০ টি টবে ফুল ও পাতাবাহারের সমারোহ; সিঁড়ি, করিডোর আর দেওয়ালে লিখিত স্বাস্থ্যবার্তা, ওয়ার্ডগুলোতে আলপনা আর প্রাসঙ্গিক চিত্রকর্ম পুরো হাসপাতালের পরিবেশকে পালটে দিয়েছে।
হাসপাতালকে রোগীবান্ধব করতে বানানো হয়েছে কিডস্ জোন (Kid's zone), শিশুপার্ক, ব্রেস্টফিডিং কর্ণার, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুন্দর কেবিন, রোগী ও স্বজনদের জন্য খাবারের স্থান, কাপড় শুকানোর নির্দিষ্ট জায়গা, মহিলাদের জন্য প্রার্থনা কক্ষ। রয়েছে রিসেপশন ও হেল্প ডেস্ক, মানবতার দেওয়াল, লাইব্রেরী এবং সাইকেল -মোটর সাইকেল গ্যারেজ। স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রচারে অডিও সাউণ্ড সিষ্টেম সংযোজিত হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে, চালু হয়েছে ইন্টারকম ব্যবস্থা। তৈরী করা হয়েছে অত্যাধুনিক কনফারেন্স রুম।
মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, সেমি অটো অ্যানালাইজার, এক্স-রে মেশিন, ডেন্টাল এক্স-রে, এইচবি১সি মেশিন, জিন এক্সপার্ট মেশিন। স্থাপন করা হয়েছে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই। এই হাসপাতালের প্রতিটি যন্ত্রপাতি সচল রয়েছে। রোগীবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে এটা একটা মাইলফলক বলে বিশ্বাস করি।
মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত ডেলিভারি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। চালু রয়েছে এএনসি ও পিএনসি কর্ণার। ৬ জন মিডওয়াইফ এবং মেডিকেল অফিসারের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে চৌকস ডেলিভারি টিম। ফলস্বরূপ, বিগত বছরের তুলনায় নরমাল ডেলিভারি বেড়েছে প্রায় ৮০ ভাগ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এসব উন্নয়নমূলক কাজে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং সাপাহার উপজেলা পরিষদ সর্বতোভাবে এগিয়ে এসেছে। সুষ্ঠুভাবে হাসপাতাল পরিচালনায় সার্বিক পরিবেশের উন্নতি এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে সজ্জিত করতে উপজেলা পরিষদ বদ্ধপরিকর।
সন্দেহ নেই, এই মুহুর্তে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাংলাদেশের সুন্দরতম স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। নান্দনিক ও নিরাপদ কর্মস্থল এবং রোগীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করে এটি উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং আন্তরিকতার সাথে সেটার বাস্তবায়ন, এই এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বহুগুণে এগিয়ে নিয়েছে নিশ্চিতভাবেই।
ডক্টর টিভি : আপনার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন কি?
ডা. মুহাঃ রুহুল আমিন : জি। ইতোমধ্যে বেশকিছু সম্মাননা পেয়েছি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১ জেলা প্রশাসক কর্তৃক- বেস্ট অফিসার অফ নওগাঁ ডিস্ট্রিক্ট সম্মাননা লাভ।
২. ২৮তম বিসিএস সম্মাননা পেয়েছি।
৩. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেয়া সম্মাননা লাভ করেছি।
ডক্টর টিভি : আপনার জন্ম বেড়ে ওঠা, পরিবার, শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই
ডা. মুহাঃ রুহুল আমিন : জন্ম নওগাঁ শহরে। বাবা স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিনী। ৫ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আমি। পড়ালেখা শুরু আল- ফারুক ইসলামী একাডেমী থেকে। এরপর নওগাঁ কে ডি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি ও বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এইচ এস সি ১৯৯৮ সালে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস এবং একই মেডিকেল কলেজ থেকে হৃদরোগের উপর পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন ডি-কার্ড ডিগ্রী অর্জন করি।