বাংলাদেশে ফিস্টুলা রোগের পরিস্থিতি ইথিওপিয়ার সমপর্যায়ে
প্রসব বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত হলে প্রসূতির যোনিপথ, মূত্রনালি ও মলনালির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশে প্রসবজনিত ফিস্টুলায় ভুগছেন প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার নারী। ফিস্টুলায় আক্রান্ত নারীর হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে। অন্যদিকে সমাজের নিম্ন আয়ের ও শিক্ষার হার কম থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই অসুস্থতার প্রকোপ বেশি। এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণা আরো বলছে, একটি মাতৃমৃত্যুর সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ জন মা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী মাতৃত্বজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ফিস্টুলা সবচেয়ে বিধ্বংসী অসুস্থতা। ফিস্টুলা নারীকে সবচেয়ে দুর্বল করে দেয়। ফিস্টুলাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রসিদ্ধ জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’ অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশে ফিস্টুলার পরিস্থিতিবিষয়ক এ গবেষণা প্রকাশ করেছে ।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্লোরিডার আইএপি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেস, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ১১ গবেষক।
গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাতৃত্বজনিত এ অসুস্থতা আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার সমপর্যায়ের। তবে আফ্রিকার আরেকটি দেশ নাইজেরিয়ার চেয়ে বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভালো। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ নেপালের চেয়ে ফিস্টুলায় ভোগা নারীর হার বাংলাদেশে অনেক বেশি।
বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে মাতৃমৃত্যু বছরে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে কমেছে। একই সময়ে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ হারে।
প্রসূতিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিস্টুলার কারণ—বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসব। প্রসব বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত হলে প্রসূতির যোনিপথ, মূত্রনালি ও মলনালির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কিছু ক্ষেত্রে যোনিপথের সঙ্গে মূত্রনালি, কিছু ক্ষেত্রে যোনিপথের সঙ্গে মলনালি, আবার কিছু ক্ষেত্রে যোনিপথের সঙ্গে মূত্র ও মলনালি যুক্ত হয়ে যায়। এতে প্রস্রাব ও পায়খানার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েন আক্রান্ত নারী। এ অবস্থায় আক্রান্ত নারী লোকজন এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। ফলে তিনি ধীরে ধীরে অনেকটা একা হয়ে পড়েন।