ওষুধ শিল্পের জন্য কার্যকর পথনকশার তাগিদ

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2022-08-11 14:20:44
ওষুধ শিল্পের জন্য কার্যকর পথনকশার তাগিদ

এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এ পথনকশা অত্যন্ত জরুরি

বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) সংক্রান্ত চুক্তির শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড়ের সুবিধা অব্যাহত রাখতে একটি কার্যকর পথনকশা তৈরি করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এ পথনকশা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় আলোচনা শুরু, দেশে পেটেন্ট আইন সংশোধন, এ পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত যত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন ইত্যাদি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

এলডিসি থেকে উত্তরণে ওষুধ শিল্পের প্রস্তুতিবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব মতামত দেন। বুধবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এই সেমিনার আয়োজন করে।

ট্রিপস চুক্তির আওতায় পেটেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তবে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য বিভিন্ন শর্ত শিথিল করা হয়। ডব্লিউটিওতে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২০২১ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত এ সুবিধা ছিল। তবে ওষুধ শিল্পের আলাদাভাবে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ সুবিধায় অন্য দেশের পেটেন্ট ওষুধ উৎপাদন করতে পারছে বাংলাদেশ। এতে উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। তবে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর ট্রিপস অব্যাহতির এ সুবিধা আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরেও ২০৩৪ সাল পর্যন্ত ট্রিপস চুক্তির শর্ত পরিপালনের আবশ্যকতা থেকে ছাড় পাওয়ার সুবিধা যাতে অব্যাহত থাকে, সে ব্যাপারে ডব্লিউটিওতে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে দক্ষ জনবল তৈরিসহ শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সুবিধা অব্যাহত রাখতে ডব্লিউটিওর বিভিন্ন ফোরামে প্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। পেটেন্ট আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে এপিআই পার্কে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা দরকার।

ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের প্রতিকূল প্রতিযোগিতার মুখে ওষুধ শিল্পের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে প্রস্তুতির প্রয়োজন। এজন্য সরকারি-বেসরকারি খাত এবং সংশ্নিষ্টদের মধ্যে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা এবং সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।

ওষুধ শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত সব পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পেটেন্ট আইন সংশোধন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি বলেন, দেশের পেটেন্ট আইনের আওতায় পেটেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। মেধাস্বত্ব-সংক্রান্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনায় সহায়ক আইনি কাঠামো প্রয়োজন বলে মত দেন বিল্ডের চেয়ারপারসন নিহাদ কবির।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ওষুধ শিল্পের অব্যাহত অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে গবেষণা বাড়ানো এবং বায়োটেক পার্ক ও জিনোম ভ্যালি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রিপস থেকে ছাড়ের মেয়াদ এবং এলডিসি উত্তরণের মধ্যে সময়ের যে ব্যবধান সে বিবেচনায় ডব্লিউটিওর কাছে আলাদাভাবে আবেদন করতে পারে বাংলাদেশ।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম প্রমুখ।


আরও দেখুন: