নেই রেফারেল সিস্টেম, বিশৃঙ্খল স্বাস্থ্যসেবা: সেমিনারে বক্তারা
প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারলেই এ মাধ্যমেই ৮০ ভাগ জনগণকে পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোনো রেফারেল সিস্টেম না থাকার ফলে পুরো স্বাস্থ্যসেবা বিশৃঙ্খলায় পরিণত হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে গেলেও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা থেকে এখনো বহুদূরে। এতে করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) হেলথ ইকোনমিক্স স্টাডি অ্যালায়েন্স কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটে ‘বাংলাদেশের সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গঠন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
বক্তারা বাংলাদেশের সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার বর্তমান অবস্থা, সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেমের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তাঁরা বলছেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারলেই এ মাধ্যমেই ৮০ ভাগ জনগণকে পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব।
সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এইমস ল্যাবের পরিচালক ডিজিটাল হেলথ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ মামুন, অলওয়েল সিস্টেম স্পেসিফিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এম এম আফতাব হোসেইন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
বক্তারা বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণায় ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে কেউ দরিদ্র হয়ে পড়বে না। সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’র ১৭টি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সে অনুযায়ী কতটা হচ্ছে। এখনো চিকিৎসার মোট ব্যয়ের ৭২ ভাগই যাচ্ছে ব্যক্তির পকেট থেকে। খরচের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে ওষুধপত্র ক্রয়ে। এসডিজি অর্জন করতে হলে এই ব্যয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
তাঁরা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও এখনো কাজই শুরু হয়নি। তাই অবশিষ্ট ১৩ বছরে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশে খুব শিগগিরই ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
এ সময় অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল্লাহ মামুন বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থায় কোনো রেফারেল সিস্টেম নাই যার ফলে পুরো স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা বিশৃঙ্খলায় পরিণত হচ্ছে। অথচ শুধুমাত্র প্রাইমারি (প্রাথমিক) স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব। দেশর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মূল সমস্যা হলো স্বাস্থ্য পর্যাপ্ত ডেটার অভাব। যার ফলে একজন রোগীর ব্যাপারে মূল্যায়ন করতে সমস্যা হয় ডাক্তারদের। এক্ষেত্রে রোগীরা হেলথ ট্যুরিজমের (বিদেশে চিকিৎসা) দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে করে খরচ বাড়ছে। এধরনের সমস্যা উত্তরণের জন্য এবং একই সাথে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেম।
ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেমের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, সেবা প্রদান এবং অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে যে ধরনের সমস্যা রয়েছে তা উত্তরণ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
ডিজিটাল হেলথ নিয়ে আলোচনাকালে অলওয়েল কিভাবে প্রাইভেট সেক্টরে ডিজিটাল হেলথ নিয়ে কাজ করছে তা তুলে ধরে আফতাব হোসাইন বলেন, “বড় ধরনের সমস্যা বা ইমারজেন্সি কেস ব্যতীত রোগীর হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই বরং এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা প্রয়জন যেখানে ডাক্তার ভিডিও কনফারেন্স করে রোগীর প্রাথমিক অবস্থা শনাক্ত করবেন এবং প্রয়োজনে ডাক্তার রোগীর বাসায় যাবেন। এছাড়া এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশকিছু
পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাসায় গিয়ে করা সম্ভব। এ ধরনের ডিজিটাল ব্যবস্থায় রোগীর ডেটাকে সংরক্ষণ করা সুবিধা হবে।
তিনি বলেন,সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর এবং ডেটা বেইজড স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের যে সাফল্য তা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।