সারা দেশে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ৮২ শতাংশ পদ ফাঁকা
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো চরম জনবল সংকট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে
দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১২ জেলায় সিটি করপোরেশন ও ৫২ জেলায় পৌরসভা রয়েছে। এসব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র করে দিয়েছে সরকার।
এই ৫২ জেলার মধ্যে ৫০ জেলার পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। যে দুটি জেলার পৌরসভায় মেডিকেল অফিসার রয়েছেন, তারাও ভালো চাকরির সুযোগ পেলে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া পাঁচটি উপজেলায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি এসব জেলার পৌরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ৫০ শতাংশের বেশি পদ ফাঁকা। শুধু কুমিল্লা জেলার পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পদ ফাঁকা ২৯ শতাংশ। সে হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরিচালিত সারা দেশের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ৮২ শতাংশ পদ ফাঁকা।
একইভাবে ১২ সিটি করপোরেশনের মধ্যে মাত্র তিন সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা পাচ্ছে মানুষ। এগুলো হলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও খুলনা সিটি করপোরেশন। বাকি ৯টি সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেবা পাচ্ছে না মানুষ।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আবদুল হামিদ এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে দেওয়া হচ্ছে, তা জানতেই এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাটি করতে দেশের ১২৮ সংস্থা ও ৩ হাজার ৪২০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র চরম জনবল সংকট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি ছাড়া এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যসেবায় তেমন কোনো অবদান নেই।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৩২৮ উপজেলার মধ্যে পাঁচ উপজেলায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে না। এসব উপজেলায়-পৌরসভায় কোনোটিতেই মেডিকেল অফিসার নেই। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও বাস্তবায়ন হয় না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসব উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডিং কমিটির কোনো বৈঠকও হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার এ বৈঠক হওয়ার কথা। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা মনিটরিং করতে কোনো জেলা ও উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো প্রতিনিধি নেই। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এনজিও, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের কোনো সমন্বয় নেই।
এমনকি এসব এলাকায় গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে (প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি) স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে কোনো কার্যক্রম নেই। দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরাও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত না বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সংকট সমাধানে প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বিত উদ্যোগেই পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।