শহরের ৪২ শতাংশ শিশুর জন্ম বাসা-বাড়িতে
বস্তির ২৮ শতাংশ কখনই গর্ভকালিন টিকা নেন না।
শহরের ৪২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা বাসা-বাড়িতে। বস্তিতে বসবাস করা মায়েদের ২৮ শতাংশ কখনই গর্ভকালীন টিকা নেন না। এছাড়া বস্তিতে বেড়ে ওঠা ৫ বছরের কম বয়সী মোট শিশুর অর্ধেকই অপুষ্টির স্বীকার। এছাড়া প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবায় গ্রামীন স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো শহরের চেয়ে বেশি ভালো এবং কার্যকরী। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ এই গবেষণা উপস্থাপন করেন।
ড. আব্দুল হামীদ গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করে বলেন, শহরের প্রান্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার। কিন্তু দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে এমন স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো পাওয়া গেছে। বাকি সিটিকর্পোরেশনে স্বাস্থ্যসেবার কোনো কাঠামো নেই। এছাড়া গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩০টি জেলার মধ্যে মাত্র দু’টিতে কিছু স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকলেও বাকি ২৮টিতে কোনো মেডিকেল অফিসারও নেই।
অন্যদিকে গ্রামীন স্বাস্থ্য কাঠামোতে ইউনিয়ন পরিষদ এবং কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের মাধ্যমে প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। এতে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছুটা সমন্বয় থাকলেও শহরগুলোতে এই সমন্বায় শুধু সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, কোভিড-১৯ এর মতো টিকাদান কর্মসূচীরর মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এদিকে বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৮.৯৫ শতাংশ শহুরে। ২০৪০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ এবং শহুরে জনসংখ্যা হবে মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ। এ অবস্থায় শহরের প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো নিশ্চিত করতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবা খাত চরম ঝুঁকিতে পড়বে বলে সতর্ক করা হয়।
ড. আব্দুল হামীদ বলেন, শহরে ধনী ও গরিবের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান অনেক বেশি। ধনীরা সাধারণত সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পেলেও গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেক বেশি বঞ্চিত হচ্ছে যা জাতীসংঘের সার্বাজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বড় চ্যালেঞ্জ।আইন অনুযায়ী প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের স্বাস্থ্য সেবায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায় থাকলেও তাদের কোনো অবদান নেই।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বিত উদ্যোগ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য মানেই শুধু রোগ আর হাসপাতাল নয়। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। শারীরিক, মানসিকসহ সব স্বাস্থ্যকেই বুঝায়। করোনায় অসংখ্য মানুষ ডিপ্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সেক্ষেত্রে শুধু করোনার চিকিৎসাতেই স্বাস্থ্যসেবা সীমাবদ্ধ নয়। মেন্টাল হেলথের বিষয়টাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। করোনা পরবর্তী নানা জটিলতাকেও সামনে নিয়ে আসতে হবে। এটিও কিন্তু স্বাস্থ্য সেবার অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, আমরা শুধু স্থাপনা করে দিলাম, আর কিছু জনবল দিয়ে দিলাম, তাহলেই কিন্তু শেষ নয়। দক্ষ জনবলের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশ নিউট্রিশন সার্ভিসে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগে অসংখ্য মানুষ রাতকানা রোগে ভুগতো, কিন্তু এখন সেই হার অনেক কমে এসেছে। পুষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে পাচ্ছে তা জানতেই এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাটি করতে দেশের ১২৮টি সংস্থা ও ৩ হাজার ৪২০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এই গবেষণার প্রাধান লক্ষ্য ছিল শহুরে মানুষের প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবার স্বরুপ তুলে ধরা।