গর্ভাবস্থায় শিশুদের হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’-তে আক্রান্তের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, সাধারণ অবস্থায় শিশুদের হেপাটাইটিস বি ও সি-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও গর্ভাবস্থায় এই ঝুঁকি ৯০ শতাংশ। এতে শিশুদের লিভার সিরোসিস ও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে বাড়িতে সন্তান প্রসবের ফলে শিশুদের এই ঝুঁকি আরও বেশি।

রবিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন চিকিৎসকরা।

সেমিনারের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, চিকিৎসার চেয়ে যেকোনো রোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে উত্তম। হেপাটাইটিস ভাইরাসটি মা থেকে শিশুকে সংক্রমিত করে। এই রোগের চিকিৎসায় সরকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে কয়েক কোটি টাকা দিয়েছে।

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে যদি চিকিৎসা ও প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিসের টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এই টিকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

মহাপরিচালক আরও বলেন, এসব কাজের জন্য অর্থের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। দেশে ব্লাড ব্যাংকগুলোতে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রক্ত পরিসঞ্চালন হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ ভাইরাস শনাক্ত হয়, সেটি বের করা গেলে হেপাটাইটিসের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

সেমিনারের সভাপতি ও ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’র জীবাণু থাকলে, তা ছয় সপ্তাহের মধ্যে সন্তানের দেহে প্রবেশ করে। গর্ভাবস্থায় পরীক্ষা করা হয় না বলে এ ব্যাপারে জানা যায় না। এ জন্য প্রত্যেক নবজাতককে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিস টিকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসবের হার অনেক পিছিয়ে। এখনো বাড়িতে ৫০ শতাংশের বেশি সন্তান প্রসব হচ্ছে। কিন্তু মা ও দাইয়ের কেউই হেপাটাইটিসের ব্যাপারে সচেতন নন। এতে মায়ের মাধ্যমে সন্তান সংক্রমিত হচ্ছে। এর জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রত্যেক গর্ভবতী নারীকে গর্ভাবস্থায় অন্তত একবার হলেও পরীক্ষা করাতে হবে। গর্ভধারণের আগেই পরীক্ষা করাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশে ১ শতাংশের কম মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। কিন্তু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি, ১৮ শতাংশের মতো। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জনই জানেন না তারা এটি বহন করছেন। পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় কমাতে হবে। একটি টিকার দাম ৩০০-৪০০ টাকা, মাসে অন্যান্য চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী দাঞ্জুমা আদা ও হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।