১৮ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পথ দেখালেন তিনি
শামীম হায়দার পাটোয়ারী
দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চাইলেই ১৮ কোটি মানুষের জন্য চিকিৎসক-নার্স দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
তবে তিনি একটি পথ বাতলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে সবার স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতের পাশপাশি স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে মানুষের জীনবও বেঁচে যাবে। অকালে ঝরে পড়তে হবে না।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় এই পথ দেখান শামীম হায়দার। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অধিবেশন শুরু হয়।
জাপার এই এমপি বলেন, আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ট্রিটমেন্ট বা চিকিৎসাভিত্তিক। এই পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল। এখন পর্যন্ত আমরা ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারি না। ডায়াবেটিকস শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। দেশে কে কে কিডনি রোগে ভুগছেন, তা আমরা জানি না।
তিনি বলেন, ইসরায়েল তার সব নাগরিকের কিডনি ডাটাবেস করেছে। পাঁচ বছর পর কার কিডনির অবস্থা কেমন হতে পারে, তা শনাক্তের ব্যবস্থা নিয়েছে। অবাক করার বিষয়, পাঁচ বছর পর ওই ব্যক্তিকে ফোন অথবা এসএমএস করে জানানো হয়, তোমার কিডনির অবস্থা খারাপ হয়ে থাকতে পারে, তুমি দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নাও। এই পদ্ধতির ফলে দেশটি তার বিপুল পরিমাণ স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কমাতে পেরেছে। জীবনও বেঁচে যাচ্ছে।
শামীম হায়দার বলেন, আমি মনে করি, আমাদের হেলথ পদ্ধতির রিজুরেগেশন প্রয়োজন। শুধু চিকিৎসা নয়, চাইলেই ১৮ কোটি মানুষের জন্য চিকিৎসক কিংবা নার্স দেওয়া সম্ভব নয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। বরং প্রেডিকশন, মোডিফাই ও আগেভাগে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের আসলে প্রেডিকশন ও ডায়াগনসিস্ট বেইজড স্বাস্থ্য পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে। তাহলে নাগরিকদের ডাটাবেস থাকবে। সময় মতো রোগ নির্ণয় করে কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। আশা করছি, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
শামীম হায়দার বলেন, আমরা জাতিগতভাবে একটি সমস্যায় পড়েছি। তরুণরা ধনী বা স্বাবলম্বী হওয়ার আগেই বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বয়স ৩৫ বা ৪০ বছর। কিন্তু তাদের বয়সের সঙ্গে বায়োলজিক্যাল বা মেডিকেল হেলথের বয়স ১০ বছর যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই বয়সেই হার্টের অবস্থা নাজুক, ফুসফুস খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডায়াবেটিস ও প্রেসার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডায়াবেটিকসে আমরা পৃথিবীতে ১১তম অবস্থানে আছি। অথচ এসব বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক একই সঙ্গে জ্বলন্ত উনুন এবং কড়াই-দুটির মধ্যেই থাকেন। এই মন্ত্রণালয় সত্যিই উত্তপ্ত। কিন্তু আমরা যেসব সমস্যার কথা বলি, মন্ত্রী কোনো পদক্ষেপ নেন না।
তিনি আরও বলেন, একটি কথা বলতে চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫০০ হাসপাতাল করেছে। কিন্তু এসব হাসপাতালে যে অ্যানেস্থেওলজিস্ট লাগবে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকরাও প্রশিক্ষণটা নিতে চান না। আমি মনে করি, যেকোনো হাসপাতাল করার আগে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অনুমান ও যাচাইবাছাই করা উচিত।
জাপার এই এমপি বলেন, কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) ২০১১ সালে মাত্র ১১ হাজার টাকা বেতনে যোগদান করেন। ১১ বছর পরও তারা একই বেতন পাচ্ছেন। এটি তাদের প্রতি চরম বৈষম্য। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় আপিল বিভাগেও নিষ্পত্তি হয়েছে। ফলে তাদের চাকরি নিয়মিত করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আমি মনে করি, দ্রুত তাদের চাকরি নিয়মিত করে আগের বেতনভাতা দেওয়া উচিত এবং এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।