এখন আর ফেরির অপেক্ষায় প্রাণ হারাবে না রোগী
পদ্মা সেতু
শরীয়তপুর, পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত দুর্গম চরসহ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপদের নাম। জেলা সদর থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৭৩ কিলামিটার হলেও পদ্মা নদীর কারণে জরুরি রোগীকেও ঢাকায় নিতে সময় লাগত ৫-৭ ঘণ্টা। অনেক সময় ফেরির অপেক্ষায় থাকতেই মৃত্যু হয়েছে অনেক জটিল রোগীর।
তাছাড়া নদী পথের ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে অনেক ভালো মানের চিকিৎসকও এখানে আসতে চাইতেন না। এলেও বদলি হয়ে চলে যেতেন। কিন্তু গৌরবের পদ্মা সেতুর হাত ধরে সকল সংকটকে পেছনে ফেলে এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা বলে মনে করছেন এই জেলার মানুষ।
শরীয়তপুর পৌরসভার তুলাসার গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম করোনাকালীন সময় মুমূর্ষু অবস্থায় এক আত্মীয়কে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাদারীপুর বাংলাবাজার ফেরিঘাট পৌঁছালে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ঘাটে তিন ঘণ্টা দেরি করতে হয়েছে। ততক্ষণে রোগী মারা যান।
সময়ের পরিক্রমায় পদ্মা সেতুর হাত ধরে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আজ শরীয়তপুরে উদিত হয়েছে নির্ভরতার সোনালী সূর্য। এ প্রাপ্তি শুধু রোগী ও চিকিৎসকদেরই স্বস্তি এনে দেয়নি জেলার ১৩ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে আনন্দের সুবাতাস।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু বিশষজ্ঞ ডা. রাজেশ মজুমদার বলেন, মুমূর্ষু অবস্থায় কোনো শিশুকে যদি ঢাকায় পাঠানো হতো তাহলে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদারীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাট দিয়ে ফেরিতে পার হতে হতো। এতে সময় লাগতো ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা। পথিমধ্যে অনেক শিশু মারাও যেত। পদ্মা সেতু সেই সীমাহীন ভোগান্তি ও মৃত্যু থেকে বাঁচাবে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুমন কুমার পাদ্দার বলেন, শরীয়তপুরের মানুষের ঢাকায় যেতে হলে একমাত্র পথ ছিল নৌপথ। যে কারণে বিশেষজ্ঞ ও গেস্ট ডাক্তার এই জেলায় পোস্টিং নিতেন না। তাই চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো ছিল না। পদ্মা সেতু হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এখন বিশেষজ্ঞ ও গেস্ট ডাক্তাররা এখানে আসবেন। জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে।
আজ (২৫ জুন) উদ্বোধন করা হয় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর সড়ক পথ। পরেরদিন ভোর ৬টা থেকে যানচলাচল শুরু হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।