দেশে কৃমি রোগ ৭ শতাংশে নেমে এসেছে
কৃমি নিয়ন্ত্রণে সব নিয়মকানুন সঠিকভাবে মেনে চলা হয়, আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসবে
দেশে ২০০৫ সালে ৮০ শতাংশ ছেলেমেয়ে কৃমি রোগাক্রান্ত ছিল। ২০০৬ সালে সরকার কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু করে। এরপর গত ১৬ বছরে কৃমি আক্রান্তদের সংখ্যা কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। রবিবার (১৯) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মাটিবাহিত কৃমি সংক্রামক ব্যাধি সামিট ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে এ জরিপ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের ৬৪ জেলায় কৃমি রোগের ব্যাপ্তি ছিল। ৮০ শতাংশ থেকে কৃমি রোগ এখন ৭-৮ শতাংশে নেমেছে। আগে এর জন্য মাল্টি সেক্টর কাজ করেছে। যে কারণে আমরা সফল হতে পেরেছি। কৃমি রোগ আমরা প্রায় নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি।
অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, যদি কৃমি নিয়ন্ত্রণে সব নিয়মকানুন সঠিকভাবে মেনে চলা হয়, তাহলে কৃমি আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্যে ৫-১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও সহকারী পরিচালক ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০০০-০৪ সালে দেশের ৩৪ জেলায় কৃমি রোগের সংক্রমণ বেশি পাওয়া যায়। সে সময় মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত ছিল। পরবর্তী সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। ২০১০ সালের মধ্যে দেশে সব জেলায় কৃমি রোগী পাওয়া যায়। পরে কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কারণে ২০১৪ সালের মধ্যে ১৯ জেলা সংক্রমণ মুক্ত হয়। ২০১৫-১৮ সালে বাকি ১৮টি জেলায় কৃমির সংক্রমণ কমে আসে।
এ কর্মকর্তা আরও জানান, দেশে এ পর্যন্ত ২৬তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ৫-১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২-১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমা ৫০০ মিলিগ্রাম) ভরা পেটে খাওয়ানো হবে।
২০০৬ সাল থেকে চলে আসা কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশের উন্নতি অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি আন্তোনিও সন্তোষ। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিশ্বের ১০০টি দেশে কৃমি প্রতিরোধ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এসব দেশে কৃমি রোগের প্রধান কারণ সাধারণত দূষিত পানি ও অনিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো ও ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অনেক অনেক বড় রাষ্ট্র। সেখানে তারা ক্রমান্বয়ে রাজ্যগুলোতে এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তবে বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও খুব দ্রুতই কৃমি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশে অবস্থানরত মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপমা হাজারিকা বলেন, কৃমি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের নিজস্ব পরিকল্পনা ও অপারেশনগুলো প্রশংসার দাবিদার। বিশেষ করে খুদে ডাক্তার প্রজেক্ট, যা শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এতে করে শিশুরা এবং তাদের পরিবার এ বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।
জনসন অ্যান্ড জনসন প্রোগ্রাম লিডার লিন লিওনার্দো বলেন, কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে পুরো বিশ্বে জনসন অ্যান্ড জনসনের অনুদানের ৪০ শতাংশ পাচ্ছে বাংলাদেশ; যা মোট অনুদানের তিন ভাগের এক ভাগ।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ডা. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সৈয়দ মজিবুল হক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ইএলএফ, এসটিএইচ, এলডি অ্যান্ড এসকেইপি, সিডিসি) ডা. এমএম আকতারুজ্জামান।