বায়ুদূষণ কমালে গড় আয়ু বাড়বে ৫ বছর

অনলাইন ডেস্ক
2022-06-15 13:24:57
বায়ুদূষণ কমালে গড় আয়ু বাড়বে ৫ বছর

বায়ুদূষণে দুনিয়ার সব অঞ্চলকে টপকে গেছে বাংলাদেশ

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোয় বাতাসে মিশছে অতিক্ষুদ্র কণা। এগুলো বায়ুর ঘনত্ব বাড়িয়ে দূষণের অন্যতম উপকরণে পরিণত হচ্ছে। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এই দূষিত বাতাস গ্রহণ করায় পড়তে হচ্ছে ফুসফুস ও হৃদরোগের মতো মরাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

এতে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু কমছে দুই বছর। এই দূষণে দুনিয়ার সব অঞ্চলকে টপকে গেছে বাংলাদেশ। দেশে মানুষের গড় আয়ু কমছে আশঙ্কাজনক হারে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে উল্টো গড় আয়ু অন্তত পাঁচ বছর বাড়বে।

মঙ্গলবার প্রকাশ হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, দূষণের কারণে পৃথিবীর মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে অন্তত দুই বছর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কমেছে পাঁচ বছর করে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পাঁচ দেশের চারটিই এই অঞ্চলের।

এর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে সাত বছর। আর ভারতের কমেছে পাঁচ বছর করে। দেশটির রাজধানী দিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী; দিল্লিবাসীর প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে ১০ বছর করে। আর ঢাকাবাসীর গড় আয়ু কমেছে আট বছর।

গবেষকরা স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাতাসে পিএম২.৫ (ক্ষতিকর ভাসমান কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে)-এর মাত্রা ইনডেস্ক করেছেন। তার ভিত্তিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশকেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে রয়টার্স বলছে, বিশ্বের ৯৭ শতাংশ মানুষ এমন এলাকায় বসবাস করছে, যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

ইপিআইসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া বায়ুদূষণের সীমা (দূষণকারী কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম) প্রয়োগ করে হিসাব করা হয়, তাহলে দেশে মাথাপিছু গড় আয়ু ছয় বছর নয় মাস করে কমছে। আর কিছু এলাকায় দূষণের মাত্রা এতই বেশি যে সেখানে গড় আয়ু কমার পরিমাণ নয় বছর।

বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজেদের নির্ধারিত সীমা (প্রতি ঘনমিটারে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ১৫ মাইক্রোগ্রাম) এবং ডব্লিউএইচওর সীমাদুটোই অতিক্রম করে গেছে।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এই বায়ুদূষণ জীবনকাল সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার বাসিন্দারা গড়ে আট বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামে আয়ু কমছে সাড়ে ছয় বছর করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সব কটিতেই বাতাসে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর সহনীয় সীমার বেশি।

স্যাটেলাইটের নতুন তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২০ সালে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৭৮ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম। দুই দশকে এই অঞ্চলে শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যার বৃদ্ধি এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বিপুল পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এই অবস্থাকে দিন দিন ভয়াবহ করে তুলছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য বায়ুদূষণের হুমকিকে খাটো করে দেখা হয়েছে এবং এই সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত তহবিলও বরাদ্দ করা হয় না।

ইপিআইসির এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের পরিচালক ক্রিস্টা হাসেনকফ বলেন, দূষণের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া বাড়ায় এখন সরকারগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে নীতি বদলানোর পক্ষে একটি শক্তিশালী কারণ উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।


আরও দেখুন: