দরিদ্ররা বেশি ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিস্টুলা হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার, অশিক্ষা, দারিদ্র্য অন্যতম
সিলেট বিভাগে গত চার বছরে ২৭৫ জন ফিস্টুলা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৬৭ জন। রোগটির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৩ মে আন্তর্জাতিক প্রসবজনিত ফিস্টুলা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে করা এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক প্রসবজনিত ফিস্টুলা দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সহযোগিতায় সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ‘ফিস্টুলা নির্মূলকরণ কার্যক্রম-২০৩০’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রধানত ফিস্টুলা রোগী শনাক্তকরণ, রেফারের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং পুনর্বাসনের আওতাভুক্ত করতে সহযোগিতা করা হয়।
রবিবার বিকেলে সিআইপিআরবির উদ্যোগে ভার্চুয়াল ফিস্টুলা-বিষয়ে এক সভা হয়। এতে সিলেট বিভাগের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল কর্মকর্তা ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিনিধিরা নিজ নিজ কার্যালয়ে থেকে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন।
সভার সূত্রে জানা যায়, সিলেটে ৩১, মৌলভীবাজারে ৬৭, হবিগঞ্জে ৯০ এবং সুনামগঞ্জে ৮৭ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ২৭৫ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ১৫২ জনকে কমিউনিটি থেকে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ১৩৯ জনের অপারেশন হয়েছে এবং ১১৩ জন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ফিস্টুলা হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, ন্যূনতম যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করা অন্যতম। বিশেষ করে হাওরাঞ্চল ও চা-বাগানে এর প্রবণতা বেশি।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এসআরএইচআর কর্মকর্তা ডা. শামীমা সুলতানা জানান, ফিস্টুলা প্রতিরোধের উপায় হলো বাল্যবিয়ে এবং কম বয়সে বাচ্চা না নেওয়া। হাসপাতালে প্রসব করানো।
সিআইপিআরবির প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম জানান, সিলেটের চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিক সংখ্যক ফিস্টুলা রোগী থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। কারণ শ্রীমঙ্গল উপজেলার তথ্যে জানা যায়, শনাক্ত ১৪ রোগীর মধ্যে ৯ জনই চা-বাগান এলাকার। সে জন্য চা-বাগান এলাকায় অধিক পরিমাণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সিআইপিআরবির সহায়তায় প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসা বিনা মূল্যে করে দেওয়া হয়। এখনো দরিদ্র রোগীদের জন্য চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ, এমনকি যাতায়াত ভাড়াও সহায়তা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।