হাসপাতালে রোগীকে নির্যাতন, ৪ এসআই বরখাস্ত
মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসাধীন আব্দুল জলিলসহ চারজনকে হাসপাতালের শয্যায় শারীরিক নির্যাতন করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রোগীকে শারীরিক নির্যাতন ও টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুলিশের ছয় সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে এ ঘটনার পর রাতেই সরিষাবাড়ী থানার চার এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত ও দুই কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. নাছির উদ্দীন আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে ওসির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাময়িক বরখাস্ত এসআই হলেন আলতাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী ও মুন্তাজ আহমেদ। আর প্রত্যাহার করে নেওয়া কনস্টেবল হলেন মোজাম্মেল হক ও সাথী আক্তার।
ভুক্তভোগী আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগম অভিযোগ করেন, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ৬৫ বছর বয়সী জলিল ভিক্ষাবৃত্তি করেন। তিনি দীর্ঘদিন ২০ শতক জায়গায় ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। এই জমি নিয়ে মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আব্দুল জলিলের দ্বন্দ্ব আছে। মামলা হওয়ার পর আদালত জলিলের পক্ষে ডিক্রি দেয়।
আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার (৯ মে) সকালে মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আব্দুল জলিল, তার স্ত্রী লাইলী বেগম, বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, মেজো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি, ছোট ছেলে হামদাদুল হক, জসিম মিয়া আহত হয়। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক চারজনকে ভর্তি করেন। এ ঘটনার পর প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন আব্দুল জলিলের পরিবারের সদস্যসহ ১৫ জনের নামে সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন।
আব্দুল জলিলের ভাতিজা রানা মিয়া বলেন, ‘মামলার পর মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে চিকিৎসাধীন আব্দুল জলিলসহ চারজনকে হাসপাতালের শয্যায় শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং চ্যাংদোলা করে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
আব্দুল জলিলের পরিবার মামলা করতে গেলেও পুলিশ নেয়নি। বরং নির্যাতন করে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতাল থেকে চারজনের নামে ছাড়পত্র নেয় পুলিশ।
সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসা চলার মধ্যেই পুলিশ হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামিদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা অমানবিক।’
সরিষাবাড়ী থানার ওসি মীর রকিবুল হক বলেন, ‘মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ অন্যদের আসামি করে মামলা করেন। পরে হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনে-হিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। না হলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো।’
এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাকির হোসেন সুমনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।