নিবন্ধন নেই কেয়ার মেডিকেলের, ইন্টার্নশিপ বঞ্চিত ৩৬ চিকিৎসক

তৌহিদুল ইসলাম তারেক
2022-04-27 17:37:03
নিবন্ধন নেই কেয়ার মেডিকেলের, ইন্টার্নশিপ বঞ্চিত ৩৬ চিকিৎসক

তারা এখন মাইগ্রেশনের সুযোগ দাবি করেছেন।

বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজের প্রভিশনাল নিবন্ধন জটিলতায় পড়েছেন ৩৬ চিকিৎসক। পাস করার পর ছয় মাস পার হলেও ২০১৫-১৬ ব্যাচের এসব শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা এখন মাইগ্রেশনের সুযোগ দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল শাহরিয়ার আহমেদ ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়ে আমরা অবহিত। আমরা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমডিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কেয়ার মেডিকেলেই শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন করতে হবে। মাইগ্রেশন বিষয়টি খুব সহজ নয়। বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাস করে কেউ চাইলেই অন্য প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে পারেন না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজের নীতিমালা অনুযায়ী যেসব মানদণ্ড থাকতে হবে, তার কিছুই পূরণ করতে পারছে না কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটিতে নেই পর্যাপ্ত শয্যা, অধ্যাপক, বিভাগভিত্তিক রেজিস্টার। স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক, নাজুক ল্যাব, অনুন্নত মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগ, রোগী স্বল্পতাসহ বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় বিএমডিসি তাদের ছাড়পত্র দিচ্ছে না। বিএমডিসি একাধিকবার সুযোগ দিলেও মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ইন্টার্নশিপসহ নানা জটিলতার মুখে সম্প্রতি অধ্যক্ষ ফারহানা সালাম পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। দুই মাস আগে বিএমডিসি থেকে কলেজে সরেজমিনে এসে অবকাঠামোগত বিষয় যাচাই-বাছাই করা হয়। এ বিষয়ে এখনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

বিএমডিসির কর্মকর্তারা ডক্টর টিভির সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, কেয়ার মেডিকেলের পদক্ষেপ সন্তোষজনক না হলে অনুমোদন দেওয়া হবে না। কলেজ কর্তৃপক্ষ নানাভাবে দৌড়ঝাপ করছে। কিন্তু মানের সাথে কোনো আপস করবে না বিএমডিসি। প্রয়োজনে ইন্টার্নশিপ জটিলতায় থাকা শিক্ষার্থীদের অন্যত্র মাইগ্রেশনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জোরালোভাবে ভাবছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ডক্টর টিভিকে বলেন, গত বছর ১ নভেম্বর থেকে আমাদের ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ছয় মাস পার হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা শুরু করতে পারেনি। এক পর্যায়ে আমরা মাইগ্রেশনের দাবি করি। প্রথমে কর্তৃপক্ষ রাজি না হলেও পরে আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে আমাদের শিক্ষা জীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আরেক শিক্ষার্থী ডক্টর টিভিকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে কেয়ার মেডিকেল কলেজ বিএমডিসির প্রোভিশনাল রেজিস্ট্রেশন না পাওয়ায় আমরা ছয় মাস ধরে ইন্টার্নশিপের জন্য পথে পথে ঘুরছি। বিএমডিসির অধিভুক্ত যেকোনো মেডিকেল কলেজে আমাদের ব্যাচের উত্তীর্ণ ৩৬ চিকিৎসকের মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

জানা গেছে, বিএমডিসি করোনা মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেয়ার মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ করার অনুমতি দেয়। পরে সরেজমিনে দেখে প্রতিষ্ঠানটি মানদণ্ড বজায় না রাখায় ইন্টার্নশিপের পাশাপাশি এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়াও বন্ধের নির্দেশ দেয় বিএমডিসি। তবে এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে তারা আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএমডিসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. এমএস লিয়াকত হোসেন ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় সরেজমিনে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের চোখে তাদের কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি। মান উন্নয়ন না করে আমাদের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জেনেছি। ফলে যেসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে পাস করবেন, তাদেরও একই জটিলতায় পড়তে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানহীন কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। এতে দেশের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। তবে ঈদুল ফিতরের পরে ইন্টার্নশিপের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প কিছু করা যায় কিনা তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। মাইগ্রেশনের সুযোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। তাদের সাথেও সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই একটি সমাধানে আসা সম্ভব হবে।’


আরও দেখুন: