ডা. এবিএম আবদুল্লাহর সাফল্যে আরেক পালক

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2022-04-18 14:38:47
ডা. এবিএম আবদুল্লাহর সাফল্যে আরেক পালক

ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহর সাফল্যে আরেকটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের ডেভিডসন কলেজ থেকে প্রকাশিত সাময়িকীর ২৪তম আন্তর্জাতিক সংস্করণের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে এ খবর জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।

তিনি বলেছেন, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ রহমতে ডেভিডসনের ২৪তম আন্তর্জাতিক সংস্করণের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনাদের দোয়ায় আমাকে রাখতে ভুলবেন না।’

ডেভিডসনের ২৪তম আন্তর্জাতিক সংস্করণের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আরও স্থান করে নিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আবদুল ফাইয়াজ ও পপুলার মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কাজী টি ইসলাম।

ডা. এবিএম আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য।

এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম সেরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বর্তমানে সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর প্রধান চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার হালিয়াবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ, এরপর শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

ডা. এবিএম আবদুল্লাহ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সব থেকে বড় আকর্ষণীয় পদ সিএসপি হতে চেয়েছিলেন। তবে মা-বাবার একান্ত ইচ্ছেয় তিনি চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ালেখা ও পরে পেশাটিকে বেছে নেন।

ঢাকা মেডিকেল থেকে ১৯৭৮ সালে এমবিবিএস পাস করেন এবিএম আবদুল্লাহ। এরপর গ্রামে কিছুদিন কাজ করে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। এখানেই তার কর্মজীবনের শুরু। প্রায় চার বছর চাকরির পরে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আসে। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্যে গিয়ে তিনি ব্রিটেনে মেডিসিনের সব থেকে বড় ডিগ্রি সিপি অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান থেকে এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্রিটেনের স্কটল্যান্ডে বেশি সময় কাটান। লন্ডনেও কিছু সময় কাটিয়েছেন।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর মধ্যপ্রাচ্যে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেলেও ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। দেশে এসে ১৯৯২ সালে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মেডিসিন কনসালট্যান্ট হওয়ার সুযোগ পান। সেখানে দুই বছর কাটান। এরপর ১৯৯৫ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে তৎকালীন পিজি (বর্তমানে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে যোগদান করেন। পরবর্তীতে এর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেওয়া হয়। এখানেই তিনি অধ্যাপক হলেন। তিনি পরপর তিনবার বিএসএমএমইউতে নির্বাচিত ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তার জ্ঞান বিতরণের এ পর্যন্ত অর্ধডজন বই লিখেছেন। তার বই এখন দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বইগুলো ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাতেও তার বইগুলো চলে।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ চিকিৎসাখাতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। করোনাকালে জনসচেতনতার স্বীকৃতি ‘কভিড হিরো’ পুরস্কার পান। তিনি ‘শর্ট কেইস অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ বইয়ের জন্য ২০১৩ সালে ইউজিসি পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমি থেকেও তাকে অনারি ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।

জীবনের এতসব অর্জনে অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মনে করেন, তার মা-বাবা, শিক্ষক, স্ত্রী ও সন্তানদের ত্যাগ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। কিংবদন্তি এ চিকিৎসক ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাস পরবর্তী শারীরিক জটিলতা ও নিউমোনিয়ায় তার স্ত্রী অধ্যাপক মাহমুদা বেগম মারা যান।


আরও দেখুন: