করোনা: বেসরকারিতে সাড়ে ১২ গুণ ব্যয় বেশি
করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে সেবা নেওয়া রোগীদের প্রায় ১৯ শতাংশ অন্য জেলায় চিকিৎসা নিয়েছেন, যা ব্যয়বহুল
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে গড়ে সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে এ ব্যয়ের পরিমাণ গড়ে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন করোনা রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় সাড়ে ১২ গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়ার খরচের মধ্যে শয্যা, ওষুধ, আইসিইউ, অক্সিজেন ও অন্যান্য খরচ রয়েছে।
গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় ২২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাননি প্রায় ৬৫ শতাংশ। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাননি ৩৩ শতাংশের বেশি রোগী। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর থেকে শয্যা পেতে সেবাগ্রহীতাদের গড়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে প্রায় ১৫ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন পেতে দেরি হয়েছে।
সরকারি হাসপাতাল থেকে কভিড-১৯ সেবা নিতে ১২ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে সেবার অপ্রতুলতার কারণে ভালো সেবা পেতে সাড়ে ২৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
টিআইবি বলছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দুই বছর পার হলেও প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষাগার স্বল্পতা, পরীক্ষাগারে সক্ষমতার চেয়ে সেবাগ্রহীতা বেশি এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে করোনার নমুনা পরীক্ষায় এখনো সমস্যা রয়েছে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬ শতাংশকে করোনার নমুনা দিতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশ বলেছেন, নমুনা দেওয়ার সময় পরীক্ষাগারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়নি। করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে গড়ে আড়াই দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে যাতায়াত বাবদ গড়ে ১৪০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। যারা সরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন, তাদের যাতায়াত, পরীক্ষা ফি ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে গড়ে ৩৯৯ টাকা খরচ করতে হয়েছে। আর বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে গড়ে ৩ হাজার ৩৮১ টাকা খরচ হয়েছে।
বর্তমানে আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৬১ শতাংশ ঢাকা শহরে অবস্থিত এবং মোট আইসিইউ শয্যার ৩৭ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে। ৩১টি জেলা হাসপাতালে এখনো আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়নি। নিজ জেলায় আইসিইউ সুবিধা না থাকায় কভিডে আক্রান্ত জটিল রোগীদের ভিন্ন জেলায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে সেবা নেওয়া রোগীদের প্রায় ১৯ শতাংশ অন্য জেলায় চিকিৎসা নিয়েছেন, যা তাদের ওপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মোটা দাগে করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের ইতিবাচক দিক রয়েছে। তবে সুশাসনের আঙ্গিকে দেখলে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। টিকার পেছনে কত অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেটির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। গোপনীয়তার সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে। সাধারণত পেছনের কোনো দুর্নীতি ঢাকতে তথ্য প্রকাশ করা হয় না, এটি উদ্বেগজনক।’