ওয়াসার পানির সাথে ডায়রিয়ার সম্পৃক্ততা নাকচ এমডির
নয়াপল্টনে আমার নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ আছে বলে স্বীকার করেন তাকসিম এ খান
হঠাৎ করেই সারা দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। সরকারি হিসাবে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীর অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।
চিকিৎসকরা বলেছেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী ও উত্তরা থেকে বেশি ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসছেন। রোগীদের অভিযোগ, তাদের এলাকার পানিতে সমস্যা রয়েছে। ফোটানোর পরও দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। আক্রান্তদের বেশিরভাগ ওয়াসার পানি না ফুটিয়ে সরাসরি পান করার পর সমস্যায় পড়েছেন।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর-বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেছেন, ‘ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। এটি পানির মাধ্যমে মুখ দিয়েই শরীরে যাবে। যেকোনো উপায়ে তারা দূষিত পানি খেয়েছে। সেটা ওয়াসারও হতে পারে বা অন্য কোনো কারণেও দূষিত হতে পারে।’
তবে ওয়াসার পানির সাথে ডায়রিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘নগরবাসীর চাহিদ-ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ দাবি করেন।
তাকসিম এ খান বলেন, ‘আইসিডিডিআর-বি’র সাথে আমাদের ঘনঘন যোগাযোগ আছে। তারা যখনই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া তখনই ১০টি এলাকার ঠিকানা আমাদের দেয়, সাথে সাথে আমরা ওইসব এলাকার পানি ল্যাবে টেস্ট করাই। সেই ল্যাব টেস্টে আমরা কোনো ব্যাকটেরিয়া পাইনি। বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পানিতে যদিও কোনো জীবাণু থাকে, সেটি যাতে মরে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায় সেজন্য ক্লোরিন দিয়ে থাকি। অনেক সময় ক্লোরিন শেষ মাথা পর্যন্ত যায় না। কিন্তু আমরা ওই বিশেষ স্থানগুলোতে ক্লোরিন বাড়িয়ে দিয়েছি। এই ডায়রিয়ার সঙ্গে আমাদের ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে যা পেয়েছি, তাতে কোনো সম্পৃক্ততা সরাসরি নেই।’
তবে ওয়াসা এমডি স্বীকার করেন, আমাদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ জায়গার মধ্যে পাইপ ফাটা থাকে। অভিযোগ পেলেই ঠিক করে দেই। তারপরও কিছু জায়গায় সমস্যা হয়। নয়াপল্টনে আমার নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ আছে। এ সময় নগরবাসীকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তাকসিম এ খান বলেন, ‘ঢাকায় পানির টোটাল চাহিদা ২১০ কোটি থেকে ২৫০ কোটি লিটার পর্যন্ত হয়। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০ কোটি লিটার। তাই রমজানে কোথাও পানির সংকট হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের সেবা খাতগুলো সূচকের দিক থেকে নিচের দিকে থাকলেও পানি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ওপরের দিকে আছে। দেশের সার্বিক জিডিপির ৪৫ ভাগ ঢাকা থেকে আসে। ঢাকায় পানির সংকট হলে তার প্রভাব সরাসরি জিডিপিতে পড়বে। এ কারণে ঢাকা ওয়াসা দেশের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে গতানুগতিকতার বাইরে এসে কর্মসূচি গ্রহণ করছে। পাশাপাশি নগরবাসীকে সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।’
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি মো. রুহুল আমিন ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক।