মানিকগঞ্জে সরছে এসেনসিয়াল ড্রাগস
প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯০৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা
দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) কারখানা তেজগাঁও থেকে মানিকগঞ্জে স্থানান্তরের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) এটিসহ মোট ১২ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেষ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সেয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সভায় যুক্ত হন তিনি।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের কাছে প্রকল্পের বিস্তারিত ব্রিফ করেন। তিনি জানান, দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় মোট ১২ হাজার ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৯৯০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৩ হাজার কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিটি গভর্নেন্স (ইউডিসিজি) প্রকল্প, ঝিনাইদহ জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং বৃহত্তর পাবনা ও বগুড়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ প্রকল্প, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়), সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস হোস্টেল নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো হলো ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট, তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সেচ প্রকল্প এবং কিশোরগঞ্জ জেলার ১০ উপজেলায় নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ, ওয়েভ প্রটেকশন এবং খাল পুনঃখনন প্রকল্প।
এ ছাড়া ঢাকায় ডেসকো এলাকায় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের, মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ইডিসিএলের তেজগাঁওয়ের ৬০ বছরের পুরাতন ও জীর্ণ প্ল্যান্টটি আধুনিক ও যুগোপযোগী করে নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। পরে সংশোধিত প্রকল্প হিসেবে একনেকে তোলা হয়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এ প্রকল্পটি মানিকগঞ্জের সদর উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯০৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
একনেক সভায় অনুমোদনের ফলে প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ইডিসিএলের পুরাতন প্ল্যান্টটি মানিকগঞ্জে কারেন্ট গুড ম্যানুফেকচারিং প্রাকটিস (সিজিএমপি) নীতিমালা অনুসরণ করে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে ওষুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চাহিদা পূরণসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতার পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। এই প্ল্যান্টটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে এর আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৩১.৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ২.২০ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন; ২৪টি বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা/অনাবাসিক ভবন নির্মাণ (৯.৬৪ লাখ বর্গফুট); অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, সেন্ট্রাল ড্রেনেজ, রিজার্ভার, ফুটপাত, ওয়াকওয়ে, ইউটিলিটি ব্রিজ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ; ৬টি ওয়াচ টাওয়ার ও ১টি ডিজিটাল পোট্রেট নির্মাণ; ৩১১৬টি আসবাবপত্র ও ২৮৪টি অফিস সরঞ্জাম ক্রয়; ৭২০টি কম্পিউটার ও ৪টি কম্পিউটার সফটওয়ার ক্রয়; ৪০ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ল্যান্ডস্কেপিং এবং ১ হাজার ৪৬৪ জনমাস পরামর্শক সেবা ক্রয় করা।
রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড সব স্তরের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের (কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) জন্য জরুরি ওষুধ উৎপাদনের বিষয়সহ স্বাস্থ্য সেবার সামগ্রিক উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে গুণগতমানের ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে সরকারি খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ওষুধ সরবরাহে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সরকারি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত শক্তিশালী হবে।
ইডিসিএল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ওষুধের চাহিদা পূরণ এবং বিদেশে ওষুধ রপ্তানির লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে ইডিসিএল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ঢাকা, বগুড়া এবং গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ওষুধ উৎপাদনকারী ইউনিট থেকে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর (সিএমএস) ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়া ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইসিডিডিআর-বি ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনে থাকে।