কেন ডায়াবেটিস হয়, কারণ আবিষ্কার

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2022-03-23 15:21:40
কেন ডায়াবেটিস হয়, কারণ আবিষ্কার

গত ৫ বছর ধরে ৩০-৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ সুস্থ মানুষের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়

মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস কেন হয়, তার কারণ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশি গবেষকরা। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক মধু এস মালো এবং জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক এটি আবিষ্কারের দাবি করেছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গত ৫ বছর ধরে ৩০-৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ সুস্থ মানুষের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গবেষণার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের নতুন যে কারণ আবিষ্কার করা হয়েছে, সেটি হলো আইএপি (ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকালাইন ফসফেটাস) কমে যাওয়া। আর আইএপি কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। আবিষ্কারের এ বিষয় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

গত কয়েক দশক ধরে গবেষকরা দেখেছেন, ডায়াবেটিস হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ টক্সিন নিয়ন্ত্রিত নিম্ন গ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহ, যার ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা কমে যায়। আর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে ডায়াবেটিস হয়।

মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়া কোষ প্রাচীরের অংশ টক্সিন (এন্ডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এ টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুক্টোজ বা অ্যালকালাইন টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। ফলে নিম্ন মোডের সিসটেমিক প্রদাহের ফলেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকালাইন ফসফাটেজ নামক এনজাইম এ টক্সিন ধ্বংস করে দেয়। ফলে এনজাইমের ঘাটতিতে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমে এবং এ টক্সিন রক্তে ঢুকে সিসটেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এতে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস, তেমনি ইশকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে (কেন না ইশকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম কারণ সিসটেমিক প্রদাহ)।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে এনজাইম বেশি থাকে, তাদের তুলনায় যাদের কম থাকাদের ডায়াবেটিস আক্রান্তের ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। স্বল্পবয়সী যাদের অন্ত্রে এনজাইম দ্রুত কমতে থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের অন্ত্রে এনজাইম কম ছিল। পরে তা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইম যাদের অন্ত্রে কম ছিল, তাদের ফাস্টিং সুগার বেড়ে যাওয়ার মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থূলদের ডায়াবেটিস হয় না।

গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, যাদের দেহে এনজাইমের পরিমাণ কম, তাদের এনজাইম খাওয়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে গবেষকরা এনজাইম তৈরির চেষ্টা করছেন।

গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’- এ প্রকাশিত হয়েছে।

ড. মধু এস মালো আগে মানবদেহের ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেজ নামক এনজাইম পরিমাপের স্টুলভিত্তিক টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এ টেস্টের মাধ্যমে এনজাইম স্বল্পতার কারণে ব্যক্তির ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা তা শনাক্ত সম্ভব হয়। যাদের ঝুঁকি রয়েছে তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ড. মধু এস মালো বর্তমানে বাডাস- এর উপদেষ্টা ও বারডেমের ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। গবেষণাতে আরও জড়িত ছিলেন বারডেমের অধ্যাপক ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালিমুর রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেকুল ইসলাম।

গবেষণায় অন্যদের মধ্যে বাডাস- এর জগন্নাথ মালো, মো. মেহেদী হাসান রকি, জিনোক বর্মন, শামেমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে বর্মন, তাপস সরকার, বারডেমের ড. মো. আবদুল মোত্তালিব, মো. নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ড. কনকরাজু কালিয়ান্নান সহায়তা করেছেন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিশ্বে বর্তমানে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও ১ কোটি ২৩ লাখের বেশি মানুষের ডায়াবেটিস রয়েছে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ১৯৫৬ সাল থেকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।


আরও দেখুন: