আন্তঃক্যাডার বৈষম্যে চিকিৎসক নেতাদের ক্ষোভ

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2022-03-13 16:39:19
আন্তঃক্যাডার বৈষম্যে চিকিৎসক নেতাদের ক্ষোভ

আমরা শাসক হিসেবে চিকিৎসা সেবায় কাউকে দেখতে চাই না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চাই

দেশের স্বাস্থ্য সেবায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক নেতারা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যখাতের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে চিকিৎসকদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত।

রবিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ২১তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চিকিৎসক নেতারা এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেকগুলো মৌলিক সমস্যা বিদ্যমান। সেগুলো দ্রুত সমাধান না করলে সামনের দিনগুলোতে অনেক জটিলতা দেখা দেবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় ক্যাডার সিস্টেমে করা সম্ভব না। হেলথ সিস্টেম ক্যাডার সিস্টেমে নিলে হবে না। এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার সমাধান হবে না। আপনাদেরও এভাবে সারা জীবন দাবি জানিয়েই যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিয়মিত পদোন্নতি হয় না। এক্ষেত্রে সোসাইটিগুলোকে বলব, আপনারা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় কাজ করবেন। চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে কথা বলবেন, সামনে তুলে ধরবেন।’

চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য বিদ্যমান। সরকারের আমলারা গানম্যান পাচ্ছেন; অন্যদিকে চিকিৎসকদের শার্টের কলার চেপে ধরা হচ্ছে। রোগীর স্বজনরা লাঞ্ছিত করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দয়া চাই না, দাক্ষিণ্য চাই না। আমাদের অধিকার দিতে হবে। যেখানে সংবিধানে বলা আছে ক্যাডার বৈষম্য থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন করতে। কিন্তু যারা করবে তারা তেলে তৈলাক্ত হয়ে বসে আছেন। সময় থাকতে চিকিৎসকদের সঠিক মূল্যায়ন করুন।’

প্রশ্ন রেখে ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘একজন আমলা কী করে একজন চিকিৎসক ছুটি চাওয়ায় তাকে শোকজ করেন জানতে চান- আপনি ছুটি চান কেন? শোকজ করবেন কোন শক্তিতে? ছুটি দেবেন না ভালো কথা কিন্তু শোকজ করা কোন ধরনের আইনের বাস্তবায়ন?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার জুনিয়র চিকিৎসক কনসালটেন্ট, দেড় বছর পদায়ন হয় না। কেন তাদের পদায়নের জন্য ঘুরতে হবে? এ রকম বৈষম্য থাকবে কেন?’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আপনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) আমলাদের প্রতিনিধি নন, আপনি চিকিৎসকদের প্রতিনিধি। আপনি আবারও মন্ত্রী হবেন, আমাদের দিকে তাকান।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বলেন, ‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে আসলে অনেক দূর এগিয়েছি। লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপনসহ নানা ধরনের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। একের পর এক বিশেষায়িত হাসপাতাল হচ্ছে। সর্বশেষ বার্ন ইউনিট হয়েছে ৫০০ বেডের, যা পৃথিবীর কোথাও নেই।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক সমালোচনার পরও শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সমালোচকরাও এখন প্রশংসা করছেন। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাদের সমালোচনার কারণেই আমরা সতর্ক থেকেছি। প্রধানমন্ত্রী সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের মধ্যে থাকা বৈষম্য নিরসন করতে হবে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে জানবাজি রেখে কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ের অনেক নেতিবাচক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। প্রকৃত পেশাজীবী মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। আমরা শাসক হিসেবে চিকিৎসা সেবায় কাউকে দেখতে চাই না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চাই। সেবা আর শিক্ষা বিভাগের টানাটানিতে অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আসরা অনেক দুর্নীতির অভিযোগ দেখেছি। চিকিৎসকরা জড়িত না। চিকিৎসকরা জানে স্বাস্থ্য সেক্টরের কোথায় কি সমস্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দেখতে চাই।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।


আরও দেখুন: