করোনাকালে দেশে বাড়তি মৃত্যু সোয়া ৪ লাখ

অনলাইন ডেস্ক
2022-03-13 13:51:51
করোনাকালে দেশে বাড়তি মৃত্যু সোয়া ৪ লাখ

৭৪টি দেশ ও অঞ্চল এবং বিভিন্ন দেশের ২৬৬টি প্রদেশে করোনাকাল ও আগের ১১ বছরের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে

করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে মোট মৃত্যু সরকারি মৃত্যুর হিসাবের প্রায় ১৫ গুণ বেশি বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে গত বৃহস্পতিবার এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে বাংলাদেশে করোনাকালে মোট মারা গেছে ৪ লাখ ১৩ হাজার জন। কিন্তু সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৮ হাজার ১০০ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনের নেতৃত্বে একদল গবেষক মহামারীকালে বৈশ্বিক মৃত্যু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। তারা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়, বাস্তবে মহামারীর প্রভাবে মৃত্যু তার চেয়ে অনেক বেশি।

গবেষকরা বলছেন, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে ৫৯ লাখ ৪০ হাজার মানুষের করোনায় মৃত্যু হয়। এ সময় করোনার কারণে বিশ্বে ১ কোটি ২৩ লাখ মানুষের বাড়তি মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে ৮ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেই হিসাবে দুই বছরে ১৭ লাখ ২০ হাজারের মানুষের মৃত্যু হওয়ার কথা। ল্যানসেটের ওই বিশ্লেষণ বলছে, ওই দুই বছরে করোনায় ২৮ হাজার ১০০ জনের মৃত্যু ছাড়াও আরও বাড়তি মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের।

৭৪টি দেশ ও অঞ্চল এবং বিভিন্ন দেশের ২৬৬টি প্রদেশে করোনাকালের এবং তার আগের ১১ বছরের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। বিভিন্ন রোগব্যাধি ও জখমে বিশ্বে মৃত্যুর যে প্রবণতা ছিল, মহামারী শুরুর পর তাতে কী পরিবর্তন এসেছে, তা গবেষকরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এই বিশ্লেষণে তারা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেছেন।

গবেষকরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মহামারীতে মৃত্যুর প্রকৃত প্রভাব অনুধাবন করা দরকার। কিন্তু অনেক দেশের সঠিক জন্মনিবন্ধন হয় না। অধিকাংশ দেশ মৃত্যুর নিবন্ধনও ঠিকভাবে করে না। এসব সমস্যা ছাড়াও কিছু সীমাবদ্ধতার কথা গবেষকরা স্বীকার করেছেন। অনেক দেশে সব মৃত্যুর পেছনের কারণের উপাত্ত নেই।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে দেশে রোগ শনাক্ত, মানুষকে করোনাবিষয়ক তথ্য দেওয়াসহ মহামারী পরিস্থিতি বিশ্লেষণের কাজে যুক্ত আছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন জানান, করোনাকালে মানুষ সেবাকেন্দ্রে যেতে পারেননি, অনেকে সেবা নেওয়া থেকে দূরে থেকেছেন। এ ধরনের বেশ কিছু কারণে মৃত্যু বেড়েছে। তবে এর সঠিক সংখ্যা এখন বলা সম্ভব না।

গবেষণার তথ্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ দাবি করে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনাকালে শনাক্তের বাইরে করোনা উপসর্গ নিয়ে যে সংখ্যক মানুষ মারা গেছে, সেটা করোনায় মোট মৃত্যুর ১০ শতাংশের বেশি নয়। সে হিসাবেও ল্যানসেটে প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে মেলে না। এ গবেষণা পর্যালোচনা করতে হবে। ঢালাওভাবে মন্তব্য করাটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।’


আরও দেখুন: