নিজের জন্য হলেও লিখতে হবে চিকিৎসকদের
যতটা সহজ করে কঠিন টার্মগুলো প্রকাশ করা যায় ততটাই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে
‘দিনের পর দিন গিয়েছে হয়নি আমার ছুটি, বুকের ভিতর ব্যর্থ কাঁদন পড়ত বৃথাই লুটি’ কাজী নজরুল ইসলামের ‘অবসর’ কবিতার মতই অবসরহীন জীবন দেশের চিকিৎসকদের। এমন ব্যস্ত সময়ে লেখালেখির মতো কাজে মনোযোগ দেওয়া অনেকটাই কঠিন।
তবুও ছুরি-কাঁচির সঙ্গে হাতে কলম তুলে নেওয়া চিকিৎসকের সংখ্যাটাও কম নয়। চিকিৎসক জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে লিখে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এসব লেখার সাহিত্য মান যেমন পাঠকের মনে প্রশান্তির সৃষ্টি করে, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জটিল ও কঠিন টার্মগুলো সহজ করে প্রকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করছে সাধারণ মানুষকে।
সাম্প্রতি পেন্সিল প্রকাশনি থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ছাবিকুন নাহারের প্রকাশিত হওয়া বই ‘রোগীকথন’ পাঠকের মধ্যে আলাদা সাড়া তৈরি করেছে। পাঠকের আগ্রহ দেখা গেছে ইবরাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জন ও সহযোগী অধ্যপাক ডা. সাকলায়েন রাসেলের বই ‘আমারও লিখতে ইচ্ছে হলো’। এসব বইয়ের গল্পগুলো অনেকটাই রোগী ঘনিষ্ট। ফলে পাঠক যেমন লেখার মধ্যে এক ধরণের গল্পের স্বাদ পায় তেমনি বিভিন্ন রোগের ধরন ও করণীয় সম্পর্কে ধারণা পায়।
এ বিষয়ে ডা. ছাবিকুন নাহার বলেন, মেডিকেলের ভাষাগুলো অনেকটাই খটোমটো হয়। আমি যখন লিখি তখন আমার পাঠকের কথা চিন্তা করে লিখি। তারা যেন বইয়ের ভাষাগুলো সহজে বুঝতে পারে আমি সেভাবে লিখতে চেষ্টা করি।
অন্যদিকে ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসরা দেশের বাইরেও অনেক ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু দেশের মধ্যেই আমাদরে চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা আস্তাহীনতা কাজ করছে। এর কারণ হতে পারে সাধারণ মানুষের অনেক বিষয়ে নূনতম ধারণাও নেই। এই ধারণাগুলো তৈরি করতে হলে চিকিৎসকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য লেখালেখির কোনো বিকল্প নেই।
দেশে ছাপা বইয়ের পাঠক সংখ্যা কমছে বলে মনে করা হলেও সাহস নিয়ে লিখতে শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। বাজারের চাহিদার চেয়ে গবেষণা এবং সচেতনতা সৃষ্টিকেই প্রাধান্য দিতে চান তারা। সাম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বাপ্নীল) এর অষ্টম বই ‘কোভিড-১৯’ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদের ‘স্বাস্থ্যখাত, করোনাকাল ও আনুষঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক বই প্রকাশ হয়েছে। এসব বইয়ে দেশের স্বাস্থ্যখাত ও করোনা মহামরীর প্রভাব বিষয়ে বিস্থারিত আলোচনা হয়েছে।
এর বাইরে এবারের বই মেলায় নতুন দুটি বই এসেছে চিকিৎসক ও বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুস্কার প্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরীর। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের নিজের স্বার্থেই লিখতে হয়। এজন্য যতটা সহজ করে কঠিন টার্মগুলো প্রকাশ করা যায় ততটাই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
এবারের বইমেলায় স্বাস্থ্য সচেতনামূলক বইয়ের পাশাপাশি পাঠকের আগ্রহ দেখা গেছে `অ্যাপ্রেনের আড়ালে’র’ মতো চিকিৎসকদের জীবনে ঘটে যাওয়া গল্পের বইগুলোও নিয়েও। বইটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৪৬ জন চিকিৎসক ও মেডিকেল ছাত্রের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে জানাশোনার পাশাপাশি চিকিৎসকদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন লেখক ও প্রকাশকরা।
আরও দেখুন:
- ডা.-সাকলায়েন-রাসেল
- ডা.-মামুন-আল-মাহতাব
- ডা.-ছাবিকুন-নাহার
- অধ্যাপক-ডা.-শুভাগত-চৌধুরী
- অধ্যাপক-ড.-সৈয়দ-আব্দুল-হামীদ