একনেকে ১৫ হাসপাতালে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প অনুমোদন

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2022-02-22 16:30:41
একনেকে ১৫ হাসপাতালে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প অনুমোদন

সব সরকারি হাসপাতালে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ৮ হাজার ৮০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘১৫টি সরকারি হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প রয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ১০টি প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন হবে ৮ হাজার ৫১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, সব সরকারি হাসপাতালে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালেও একই বিষয়ে শৃঙ্খলা আনার তাগিদ দেন একনেক চেয়ারপারসন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় খাতে যারা বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহার করেন তারা গরিব নয়। গুলশানে যারা বসবাস করেন তারা গরিব নয়। সেজন্য প্রাথমিকভাবে বড় বড় শিল্প খাতের গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে বলেছেন। এছাড়া ভর্তুকি কমানোর কৌশল বের করতে বলেছেন তিনি।’

‘ভর্তুকি কোনো সভ্য দেশের সমাধান নয়’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তাই ধীরে ধীরে গ্যাস-বিদ্যুতের ভর্তুকি থেকে সরে আসতে হবে। তবে কৃষি ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৫ সরকারি হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প প্রস্তাবে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত আদর্শমান বজায় রেখে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ১৫টি (৩টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার শেরেবাংলা নগরের ৪টি হাসপাতালের জন্য একটি, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং ১০টি সদর হাসপাতাল) চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। প্রকল্প শেষে স্থাপিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে আধুনিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) প্রকল্পটি একনেকে উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাসপাতাল বর্জ্য পরিশোধনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, এমনকি এইডসের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি বাড়ছে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ছাড়াই বিভিন্ন চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অপসারণের সক্ষমতা তৈরি হবে এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও সংক্রমণমুক্ত পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জনবহুল শহরগুলোতে দৈনিক যে বর্জ্য সৃষ্টি হয় তার ৮০ শতাংশ সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্য আর ২০ শতাংশ মেডিকেল বর্জ্য। এই ২০ শতাংশ মেডিকেল বর্জ্য কোনো না কোনোভাবে ৮০ শতাংশ সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, পরিশোধন ও চূড়ান্তভাবে অপসারণের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে বর্জ্যকে জীবাণুমুক্তকরণের মাধ্যমে সাধারণ বর্জ্যে রূপান্তরিত করা হবে। এজন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে ৩৫টি হাসপাতালে ৩টি পদ্ধতি (অটোক্লেভিং, ইনসিনারেশন ও ইটিপি) প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৪৫টি চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, ১৫টি ক্যাটাগরি এ, বি, ও সিভুক্ত স্থাপনা অনাবাসিক ভবন, সরবরাহ সেবা, ২টি যানবাহন ভাড়া, ৫টি আউটসোসিং সেবা, ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা, ৪৭টি আসবাবপত্র ক্রয়, ১২টি কম্পিউটার এবং আনুষঙ্গিক ক্রয়, মেরামত, সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন করা হবে।


আরও দেখুন: