নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ

অনলাইন ডেস্ক
2022-02-20 14:15:48
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ

আইনটি সংশোধন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দুই বিভাগে আলাদা করার পর যে প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার নিরসন হবে

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভা বৈঠকের এজেন্ডায় ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, ২০২২’ রাখা হয়েছে।

রবিবার দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনটি সংশোধন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দুই বিভাগে আলাদা করার পর যে প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার নিরসন হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন এবং মন্ত্রীরা সচিবালয় থেকে এ বৈঠকে অংশ নেবেন।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি সংস্থা। কোর্স কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, পেশাগত নিবন্ধন এ সংস্থার কাজ।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়। অথচ তার আগেই ২০১৬ সালে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন চালু হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হওয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নাম এবং কয়েকটি পদের নাম পরিবর্তন হওয়ায় আইনটি পরিমার্জন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ পদ পরিচালক সেবা পরিদপ্তর। অথচ এ পদ হবে মহাপরিচালক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। অধিদপ্তরটি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অধীনে হলেও আইনে রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম।

এ ছাড়া পরিবারকল্যাণ পরিদর্শকের স্থলে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্থলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের স্থলে উপযুক্ত ফৌজদারি আদালত বা মোবাইল কোর্ট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের স্থলে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াফারি কাউন্সিল প্রতিস্থাপনের দরকার দেখা দেয়।

এক সময় নার্সিং ‘দ্য বেঙ্গল নার্সেস অ্যাক্ট, ১৯৩৪’, ‘দ্য পাকিস্তান নার্সিং কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৫২’ এবং ‘দ্য বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৩’ অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, ২০১৬’ অনুযায়ী এ সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংশোধন হলে এই সংস্থা পরিচালিত হবে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, ২০২২’ অনুযায়ী।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে বিভক্ত করায় নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছিল আইন সংশোধন না করে কাজ চালিয়ে নেওয়ার। কিন্তু সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনো অধিকাংশ মানুষ মিডওয়াইফের প্রয়োজন অনুভব করে না। তারা ভাবে, চিকিৎসক ছাড়া চলবে না। অথচ ডেলিভারির ক্ষেত্রে মিডওয়াইফই প্রধান ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ তারাই ভালো বুঝবেন কখন কী করতে হবে। দক্ষ মিডওয়াইফ গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের এক পরিচালক জানান, নার্সিং মাতৃস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে নার্স বা মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গুণগত মানসম্পন্ন নার্স ও মিডওয়াইফরা দেশের বাইরেও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রতিরোধযোগ্য ক্ষেত্রে ৫ হাজার ২০০ নারী জন্মদানের সময় মারা যান। একই কারণে প্রতি সপ্তাহে ১০০ গর্ভবতী নারীর মৃত্যু ঘটে। সরকার একজন চিকিৎসকের জন্য তিনজন নার্স দেওয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই নার্স ও মিডওয়াইফদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মিডওয়াইফ ইনস্টিটিউট আছে ৩১৭টি। এগুলোর মধ্যে সরকারি ৯৯টি। বেসরকারি ২১৮টি। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বের হচ্ছেন। দেশে নার্সের ঘাটতি আছে প্রায় দুই লাখের বেশি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফ থাকলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু ঠেকানো যায়। নবজাতকের মৃত্যু কমানো যায় ১৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এক সময় নার্সিংয়ে পড়তে শিক্ষার্থী পাওয়া যেত না। এখন সিট পাওয়া যায় না। এর কারণ নার্সের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণির করা হয়েছে। যেসব গ্র্যাজুয়েট কিংবা এমএসসি করা নার্স আছেন, তাদের প্রথম শ্রেণিভুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। নিয়ম অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিকের পর চার বছর মেয়াদি কোর্স সম্পন্ন করলেই প্রথম শ্রেণির চাকরিতে আবেদন করার যোগ্যতা লাভ করেন। সে হিসেবে আমাদের প্রশিক্ষিত নার্স কিংবা মিডওয়াইফারদের এই সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু তারা এটা পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশে নার্সিং পেশা অপেক্ষাকৃত পুরনো। মিডওয়াইফারি পেশা সে তুলনায় একদম নতুন। ২০১০ সালে মিডওয়াইফারি কোর্স চালু হয়। এটি ছিল সার্টিফিকেট প্রদান কোর্স। ২০১২ সাল থেকে ডিপ্লোমা কোর্স শুরু হয়।


আরও দেখুন: