দেশেই ওমিক্রন প্রতিরোধী টিকা তৈরির দ্বার উন্মোচন
গবেষণার জিনোমিক ডাটাবেজ থেকে বাংলাদেশে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে
ডেল্টার চেয়ে করোনার ওমিক্রন ধরন অনেক বেশি সংক্রামক। এ ধরনটির জিনোমে ডেল্টার চেয়েও বেশি রূপান্তর (মিউটেশন) মিলেছে, যার বেশিরভাগ ঘটেছে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) করোনার ৯৩৭টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এমন তথ্য পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ফলাফল প্রকাশ করেন জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রকল্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যতগুলো টিকা আবিষ্কার হয়েছে, তা ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে। ওমিক্রনের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ভাইরাসটির মিউটেশনের রহস্য সামনে আসায় দেশেই ধরনটি প্রতিরোধী টিকা তৈরির দ্বার উন্মোচন হলো বলে মনে করছেন গবেষণা সংশ্লিষ্টরা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন বাংলাদেশে সংক্রমণের প্রধান উৎস ওমিক্রন, যা কিছু দিন আগেও ছিল ডেল্টার দখলে। ওমিক্রন আক্রান্ত অনেকে দুই ডোজ টিকা নেওয়ায় ভাইরাসটির প্রখরতা কম হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো আক্রান্ত রোগীর দেহেও ওমিক্রন মিলেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জিনোম সিকোয়েন্স করে ৬৫ শতাংশ ওমিক্রন ও বাকিদের ডেল্টায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
এতে আরও বলা হয়, মৃদু উপসর্গ হওয়ায় ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ওমিক্রনে ডেল্টার চেয়ে কম মাথাব্যথা ও সর্দির মতো উপসর্গ হয়। ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা কম। এ গবেষণার জিনোমিক ডাটাবেজ থেকে বাংলাদেশে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে বলে মনে করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘করোনার প্রত্যেক ধরনই বিপজ্জনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশন আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এজন্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
গবেষণায় বলা হয়, ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমুনার ২০ শতাংশ ওমিক্রন ছিল। এ সময় ওমিক্রনের মাত্র একটি উপ-ধরন (বিএ.১) পাওয়া গিয়েছিল। বাকি ৮০ শতাংশের ডেল্টা ধরন পাওয়া যায়। কিন্তু ১৯ জানুয়ারি থেকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি ও বহির্বিভাগের রোগীর মধ্যে ৮২ শতাংশের ওমিক্রন এবং ১৮ শতাংশ ডেল্টায় আক্রান্ত। এ সময় ওমিক্রনের তিনটি উপ-ধরন (বিএ.১, বিএ১.১ ও বিএ.২) পাওয়া গেছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তিনটি উপ-ধরনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক বিএন.২।