অনিশ্চয়তায় দেশের মেডিকেল শিক্ষা

তৌহিদুল ইসলাম তারেক
2022-01-27 20:23:01
অনিশ্চয়তায় দেশের মেডিকেল শিক্ষা

ফের বন্ধ রয়েছে মেডিকেল কলেজগুলো

ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র রাশেদ সম্প্রতি ইন্টার্ন করছে ঢাকারই একটি হাসপাতালে। তার এই ইন্টার্ন পর্ব শেষ হওয়ার কথা ছিল আরো এক বছর আগেই। কিন্তু গত লক ডাউনের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।   

করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ ৫৪৪ দিন বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সাথে বন্ধ ছিল মেডিকেল কলেজগুলোও। করোনা বিধিনিষেধের ফাঁদে ব্লক ফাইনালের জন্য নির্ধারিত ৩ মাসের জায়গায় তারা সময় পান মাত্র দেড় মাস। আর ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পিছিয়ে যায় ১০ মাস । ফলে রাশেদের মত বাংলাদেশের সকল মেডিকেল শিক্ষার্থীই এক থেকে দেড় বছর পিছিয়ে পড়ে। 

এতে যে  শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল তা পূরণে যে সময় প্রয়োজন সে সময়ের অর্ধেক সময়ও পায়নি তারা।  দেড় বছরের কোর্স এনাটমি বা দেহতত্ত্ব গলধঃকরণ করতে হয়েছে ৩ মাসেই।

স্বশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও এক পর্যায়ে কলেজগুলো অনলাইন ক্লাস শুরু করে। যে মাধ্যমের শিক্ষা হাতে-কলমেই বেশি, তা অনলাইন আসায় বিপাকে পড়েছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।    

সংক্রমণ কমে আসায় গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা। সবকিছু স্বাভাবিক চললেও সম্প্রতি করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত ২১ জানুয়ারি সরকার আবারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।

সরকারের এ ঘোষণা মেনে ফের বন্ধ রয়েছে মেডিকেল কলেজগুলো। হচ্ছে না স্বশরীরে ক্লাস। ৩য় থেকে ৫ম বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হাস্পাতালের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে ঘুরেই অর্জন করতে হয় ব্যবহারিক জ্ঞান। কিন্তু বারবার মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে ভবিষ্যৎ চিকিৎসা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে কিনা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিককেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেডিকেল শিক্ষা মানেই হচ্ছে কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষা। অন্যান্য পেশার মানুষ মৃত ফাইল দেখলেও একজন চিকিৎসক দেখেন জীবিত ফাইল। সুতরাং এখানে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে প্রখ্যাত অধ্যাপক ডা সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, আমাদের এই পড়ালেখার উপর মানুষের জীবন মরণের সাথে জড়িত এবং এই ধরণের শিক্ষা এমন হবে যেন তা নির্ভুল হয়।

ভিডিও নিউজ দেখতে ক্লিক করুন

তিনি আরো বলেন একজন চিকিৎসকের কাজ একজন পাইলটের মত। বিমান অবতরণের সময় পাইলটকে নির্ধারিত জায়গাতেই তা অবতরণ করতে হয়। হালকা ডান-বাম হলেই যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে চিকিৎসকদের জন্যও তাই।

চিকিৎসা শাস্ত্রের পড়াশোনায় রয়েছে বিশেষত্ব। রয়েছে সূক্ষ্ম সংবেদনশীল ব্যবহারিক পড়াশোনা। অনলাইনে ক্লাস মেডিকেল শিক্ষায় কতটুকু চাহিদা মেটাতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এই শিক্ষা কতটুকুই মানসম্মত প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও ।   

অধ্যাপক আতিক বলেন, অনলাইন মোটামুটি একটি কার্যকর মাধ্যম হলেও অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত মেডিকেল শিক্ষার্থীর কাছে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার নেই। মোবাইল বিকল্প ধরা তা আসলে আদর্শ নয়। সবার কাছে কম্পিউটার পৌঁছানো গেলে পুরোদস্তুর অনলাইন ক্লাস শুরু করা যেত।

মহামারির সংকটকালেও বিশেষভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থাকে অপূরণীয় ক্ষতি থেকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন দেশের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা।

তিনি বলেন মেডিকেলের পাঠ্যক্রমকে সংকুচিত না করে প্রয়োজনে পাঠক্রমের বর্ষ পিছিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে ক্ষতি পুরোপুরি কমানো না গেলেও তা যথেষ্ঠ হবে।

দেশের মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনলাইনের পাশাপাশি একটি ক্লাসকে দুই শিফটে ভাগ করে ব্যবহারিক ক্লাস চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। শিক্ষকদের কোনো ছুটি নেই বলে তিনি আরো বলেন শিক্ষকেরা প্রয়োজনে একই লেকচার দুইবার দেবেন। এতে করে ক্ষতি অনেকটুকুই পূরণ করা সম্ভব।

করোনা সংক্রমণ হ্রাস করতে বার বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও চলছে বাণিজ্য মেলা। প্রস্তুতি চলছে বইমেলারও। সকল জনসমাগমে নামেমাত্র বিধি নিষেধ থাকলেও বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয় নি।

 


আরও দেখুন: