মহামারী মোকাবেলায় প্রয়োজন ‘কমিউনিটি এনগেজমেন্ট’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী
আমাদের দেশে ‘এপিডেমিক প্রজেকশন প্ল্যান’ নাই। সেই প্ল্যান অনুযায়ী আমাদের তীব্রতার মাত্রাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নাই। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে ধাপগুলো নির্দিষ্ট করার কথা, সেটা আমরা করিনি। অর্থাৎ এখন ৬ শতাংশের সময় যেটা হওয়া দরকার, প্রত্যেকটা মানুষকে মাস্ক পরতে হবে।
এটিকে একদিকে যেমন নৈমত্তিক প্রশাসনিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং যেসব পরিবারের মাস্ক নেই তাদেরকে মাস্ক দিতে হবে। অন্যদিকে এই কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ভাষায় যেটাকে বলা হয় ‘কমিউনিটি এনগেজমেন্ট’।
দেখুন বহুদিন যাবৎ আমরা একটা বিষয় আলাপ করি এসেছি যে, জনগণকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়।
এক নম্বর হলো- যদি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা পাড়ায়-মহল্লায়-এলাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অথবা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিকে (কমিউনিটি লিডার) কেন্দ্র করে একটা ছোট্ট সেচ্ছাসেবক দল বা টিম অথবা করোনা প্রতিরোধী কমিটি যে নামেই হোক না কেন করা হয়। সেখানে এর পাশাপাশি তরুণরা থাকলো।
নির্বাচনের সময় আমরা যেমন গিয়ে ভোট চাই, তেমনই প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে গিয়ে (পাড়া-মহল্লা) বললো, আপনার বাসার প্রত্যেকটি মানুষকে মাস্ক পরে বাইরে বের হতে হবে। আপনি মাস্ক না পরলে আপনি যেমন অনিরাপদ থাকবেন, আপনার কারণে আমরাও বিপদের মুখে পড়বো। অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া কেউ বের হলে আমরা আপনাদেরকে আটকে দেবো, বের হতে দেবো না।
দুই নাম্বার হচ্ছে- যদি কোনো পরিবারের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়, তাহলে ওই পরিবারকে তো আমরা কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে রাখি। তাদের প্রতিদিনের বাজার কে করে দেবে? চাল-ডাল-নুন-তেল কে কিনে দেবে? তাহলে ওই সেচ্ছাসেবকদের থেকে একজন/দুইজনকে দায়িত্ব দিতে হবে।
তাদের ওষুধ কেনার ব্যাপার আছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে। এরা সহায়তা করবে। যদি কোনো পরিবারের অর্থনৈতিক অসুবধিা দেখা দেয়, তাহলে এই সেচ্ছাসেবকরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করবে।
অন্যদিকে যেসব পরিবারের টিকা নেওয়া হয়নি অথচ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ রয়েছে, তাদেরকে টিকা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করবে স্বেচ্ছাসেবকরা। তাহলে কী দাঁড়ালো? আমরা যদি প্রত্যেকটা এলাকায়-মহল্লায় এভাবে ওই এলাকার মানুষকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে পুরো দেশটা কিন্তু সুরক্ষিত হবে।
দুঃখজনক যে, এই প্রক্রিয়াটা সরকার নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শেষদিকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছিল এক ধরনের। কিন্তু তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। নেওয়া হলে সম্ভবত করোনা প্রতিরোধের জায়গায় আমরা অনেক দূর অগ্রসর হতাম। আমাদেরকে দুঃখ করতে হতো না, আমাদের চারপাশের দেশগুলোর মধ্যে টিকা নেওয়ার হার বা দেওয়ার হারে আমরা প্রায় সর্বনিম্নে। এই দুঃখটা করতে হতো না।