পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার বাড়ছে
পুরুষ সমকামী, হিজড়া ও ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রগ নেওয়াদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার বাড়ছে
নারী যৌনকর্মীর চেয়ে পুরুষ সমকামী, হিজড়া ও ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রগ নেওয়াদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার বাড়ছে।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় এইচআইভি/এসটিজি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর তত্ব্যাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের করা ‘ইন্টিগ্রেটেড বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড বিহ্যাভিয়ারাল সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
গবষেণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিএসএমএমইউ ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভিতে আক্রান্তের হার ১ শাতাংশ হলেও পুরুষ সমকামী, হিজড়া ও ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই হার ৪.১ শতাংশ।
গবেষণায় দেশের ২৩ টি জেলার ঝুকিপূর্ণ চার ক্যাটাগরির দশ হাজার জন অংশ নেয়। গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের সাক্ষাৎকার ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি ছাড়াও হেপাটাইটিস সি ও সিপিলিসের পরীক্ষাও করা হয়। গবেষণায় দেখা যায় ৪৭ শতাংশ পুরুষ সমকামী ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সের। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ অবিবাহিত ও ২৯ শতাংশের মধ্যে কমপক্ষে একজন স্ত্রী আছে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির মধ্যে ১৬ শতাংশ এইচআইভি রোগে আক্রান্ত।
গবেষণায় ১১৭২ জন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠি অংশ নেয় এর মধ্যে ১৮৯ জনের মধ্যে এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া যায়। গবেষণার প্রধান সমন্বয়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, মহিলা যৌন কর্মীদের মধ্যে এইচআইভি কমে আসলেও পুরুষ বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে এটি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। হেপাটাইটিস আক্রান্তদের দ্রুতই চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মধ্যে হেপাটাইটিস সি, সিপিলিস, এইচআইভি রোগের প্রভাব বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, আশির দশকে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতির দেশ। আমাদের অনেক লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য অবস্থান করে। তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় কিছু অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া আমাদের দেশেও বিশ্বের অনেক দেশের প্রায় কয়েক লক্ষ লোক কাজের সুবাদে অবস্থান করে। এ কারনে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে এই রোগের প্রভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে দৌড়াই। সন্তানরা কাজের বুয়ার কাছে মানুষ হয়। এ কারনে উচ্চবিত্ত পরিবারে এই হার অনেক বেশি। রেড জোনগুলোতে চিকিৎসার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। গ্রামাঞ্চলে এই রোগের হার খুব কম আছে তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে এই রোগগুলো কোনোভাবে ছড়িয়ে না পড়ে।
এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভাইসচ্যাঞ্চেলর অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এইচআইভির চেয়ে হেপাটাইটিস সি দশগুণ বেশি ছড়ায়। আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ অন্যজন ব্যবহারে শতভাগ আক্রান্ত হবে। এ ব্যপারে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, আজকের এই গবেষণা প্রতিবেদন আমাদের একটা প্রথমিক ধারণা দিচ্ছে, আমাদেরকে আরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। ঝুকিপূর্ণ এই চার ধরণের জনগোষ্ঠিকে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে।