স্ট্রোক হলে কোথায় যাবেন?
স্ট্রোক কী, কেন হয়?
স্ট্রোক হলো ব্রেইন বা মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিস্কের রক্তনালীর অন্যতম একটি রোগ হলো স্ট্রোক। রক্তনালীতে কখনো রক্ত জমাট বেঁধে কিংবা রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তক্ষরণের কারণে ব্রেইনের একটি অংশ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
স্ট্রোক দুই ধরনের
এক. মস্তিস্কের রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ
দুই. রক্তনালী ব্লক হয়ে গিয়ে মস্তিস্কে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছানো যার ফলে ওই অংশ শুকিয়ে যায়।
স্ট্রোকের কারণ
অতিরিক্ত টেনশন, হৃদরাগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি বা অতিমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতির কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এগুলোর থেকেও অন্যতম একটি কারণ হল ধূমপান।
স্ট্রোকের লক্ষণ
সবার ক্ষেত্রেই স্ট্রোকের লক্ষণ এক রকম নাও হতে পারে। তবে কিছু লক্ষণের কথা বলবো যেগুলো দেখা দেওয়া মাত্রই কালক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন FAST। F মানে মুখ বেঁকে যাওয়া, A মানে হাতে দুর্বলতা, S মানে কথায় জড়তা এবং T মানে সময়। দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিন।
কেন দ্রুত হাসপাতালে নেবেন?
কারণ স্ট্রোকে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোক হলে প্রতি মিনিটে ১৯ মিলিয়ন নিউরোন মারা যায়। স্ট্রোকের সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আসলে আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, যেটাকে বলে আইভি থ্রোম্বলাইসিস। দেশের অনেক হাসপাতালে সীমিত পরিসরে হলেও এ আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে।
স্ট্রোক হলে কোন হাসপাতালে যাবেন?
স্ট্রোক করলে অনেকে ভুলে রোগীকে হৃদরোগের চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা মনে করেন স্ট্রোক বুঝি হার্টের রোগ। আসলে তা নয়। স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের বা ব্রেনের রোগ। তাই স্ট্রোক করলে রোগীকে নিতে হবে এমন হাসপাতালে যেখানে মস্তিষ্কের চিকিৎসা হয়। রোগীকে নিতে হবে নিউরোলজিস্টের কাছে।
স্ট্রোকের চিকিৎসা
এক. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালে (নিনস) স্ট্রোকের আধুনিক সব চিকিৎসা হয়। দেশের মধ্যে একমাত্র এখানেই স্ট্রোক ইউনিট আছে। স্ট্রোক ইউনিটে ১০০ বেড আছে। একমাত্র এখানে আইভি থ্রোম্বলাইসিস নিয়মিতভাবে এখানে হয়।
তবে রোগীর চাপ বেশি বলে এখানে সব সময় সিট পাওয়া যায় না। এখানে ভর্তি হতে পারলে স্ট্রোকের সব চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব।
দুই. ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। দেশের নাম করা হাসপাতাল এটি। এখানে যদিও আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা হচ্ছে না। তবে তাড়াতাড়ি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিন. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নতুন করে স্ট্রোক ইউনিট চালু করা হয়েছে। এখানে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে। নতুন চালু হওয়া জরুরি বিভাগে স্ট্রোকের তিনটি বেড আছে।
এছাড়া দেশের যেকোনো মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগে স্ট্রোকের চিকিৎসা সম্ভব।
বেসরকারিভাবে শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে। আশার কথা হলো স্ট্রোকের চিকিৎসায় নিনসের মতো আরও হাসপাতাল বিভাগীয় শহরগুলোতে হবে শিগগিরই।
স্ট্রোকে কেউ আক্রান্ত হলে দেরি না করে নিউরোলজি বিভাগে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, স্ট্রোক মস্তিষ্কের রোগ, হার্টের নয়।