দাঁত উঁচু-নিচু ও আঁকাবাঁকা হওয়া যেভাবে ঠেকানো যায়
যদি দাঁত একটার ওপর আরেকটা ওঠে, তাহলে সেক্ষেত্রে সেখানে খাদ্যকণা জমে থাকে এবং দাঁত আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যায়।
দাঁত উঁচু-নিচু এবং আঁকাবাঁকা যে কারও জন্ম থেকে শুরু হতে পারে। মুখের অনেক রকম অসামঞ্জস্য থাকতে পারে। সেটা শিশু জন্ম থেকে নিয়ে আসতে পারে অথবা সেটা ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারে। তো যেটা মানুষ জন্ম থেকে নিয়ে আসে, সেটার কারেকশন আস্তে আস্তে হবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে। যখন অভিভাবকের মনে হবে, বাচ্চার মুখে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, তখন অবশ্যই বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসবেন।
কিছু জিনিস তৈরি হয় ছোটবেলায় আমাদের বদ অভ্যাস বা কিছু ভুলের কারণে। ফলে দেখা যায়ে, যে দাঁত ফাঁকা হওয়ার কথা ছিল না, সেটা ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। যে দাঁতগুলো উঁচু-নিচু হওয়ার কথা ছিল না, সেগুলো দেখা যায় ধীরে ধীরে এ রকম হয়ে যাচ্ছে।
তো এটা আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি? এক্ষেত্রে আমরা মায়েরা অথবা বাচ্চার অভিভাবকেরা বাচ্চাকে অবশ্যই আঙুল চুষতে দেবো না। কারণ, বাচ্চারা ছোটকাল থেকে যদি আঙুল চুষতে থাকে, এর ফলে দেখা যায় যে দাঁতগুলো উঁচু হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে ফাঁকা হতে থাকে। তো বাচ্চাদের এই অভ্যাসটাকে আমরা বাড়তে দেবো না। আমরা চেষ্টা করবো বাচ্চা যখনই মুখে আঙুল দেবে, সেটাকে সরিয়ে দিতে।
সব বাচ্চাদের মোটামুটি তিন বছর বয়সের মধ্যে দুধ দাঁত উঠে যায়। সেই বেলায় আমরা কী করবো? এই দাঁতগুলোকে আমরা কীভাবে সুন্দর করলে পরবর্তীতে দাঁতগুলো উঁচু-নিচু বা আঁকাবাঁকা হবে না, দাঁত একটার ওপরে আরেকটা উঠবে না?
যদি দাঁত একটার ওপর আরেকটা ওঠে, তাহলে সেক্ষেত্রে সেখানে খাদ্যকণা জমে থাকে এবং দাঁত আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যায়। হয়তো পরবর্তীতে সেই দাঁত ফেলেও দিতে হতে পারে। বাচ্চাদের দাঁত ওঠার যেমন একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, ঠিক তেমনি বাচ্চাদের দাঁত পড়ারও একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। তো আমরা যেটা করবো, সেটা হলো- নির্দিষ্ট সময়ে আমরা দাঁতটা যেন ফেলতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখবো। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে নির্দিষ্ট সময়ের আগে যেন দাঁত না পড়ে। যেমন একটা দাঁতে একটু ক্ষয় হয়েছে, সেটা আমরা সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিলাম ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া। এই কাজটা একদমই করা যাবে না।
অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অভিভাবকদের বোঝান, এভাবে দাঁত ফেলে দিলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকরা নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে দাঁতগুলো ফেলবেন না। প্রত্যেকটা দাঁত পড়ার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। আমরা যদি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই দুধ দাঁত ফেলে দেই, তখন দেখা যাবে যে দাঁতটা ফেলে দেওয়া হয়েছে, তার পাশের দাঁত হেলে পড়েছে। পরবর্তীতে যেই দাঁতটা উঠবে, সেটা তখন আর জায়গা পায় না। তখন সেই দাঁতটা হয়তো সামনে দিয়ে উঠবে, নয়তো পেছন দিয়ে উঠবে, অথবা একটু কাত হয়ে উঠবে। তার মানে সেই দাঁত তার জায়গা না পাওয়াতে সে ঠিকমতো উঠতে পারে না। আর উঠলেও দেখা যায় দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে ওঠে, নয়তো দেখা যায় সেই দাঁত আর উঠতেই পারল না।
অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চাদের দুধ দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমরা চিকিৎসা করি না। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই দাঁতটা ফিলিং করিয়ে ফেলতে হবে। আবার কিছু দাঁত আছে সময় মতো পড়ছে না, দাঁতটা অনেকদিন ধরে রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে দুধ দাঁত যদি অনেকদিন ধরে রয়ে যায়, সেক্ষেত্রে স্থায়ী যে দাঁত আছে সেটা আর উঠতে পারে না। তখন সেই দুধদাঁত ডাক্তারের কাছে গিয়ে ফেলে আসতে হয়।
ধরনের সমস্যার কারণে বাচ্চাদের দাঁত উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা, দাঁত একটার ওপর আরেকটা ওঠা- এরকম হয়ে থাকে। সমস্যা যাই হোক তার একটা স্থায়ী সমাধান আছে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ ডাক্তারের কাছে আসলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তাররা চিকিৎসা শুরু করেন। শিশুবেলায় চোয়াল যদি একটু উঁচু হয় বা নিচু হয় বা সামনে আগানো থাকে বা পেছানো থাকে, তখন ছোট বাচ্চাদের কমবয়সে চিকিৎসা শুরু করা হয়। আবার দেখা যায়, যখন স্থায়ী দাঁত উঠে যায় ১৩ বছরের দিকে, তখন সে চিকিৎসা করা হয়। আবার সব চিকিৎসা যে ১৩ বছরে করতে হয় তা নয়। এসব ক্ষেত্রে ছয় মাস পর পর ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। ডাক্তারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হয়।