চিকিৎসায় নোবেলে অবদান কাঁচা মরিচের!

অনলাইন ডেস্ক
2021-10-05 14:39:17
চিকিৎসায় নোবেলে অবদান কাঁচা মরিচের!

জুলিয়াস ও প্যাটাপুটেন তাদের গবেষণার শুরু করেন কাঁচা মরিচ দেখে

তাপমাত্রা ও স্পর্শের রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য চলতি বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড জুলিয়াস এবং লেবানন বংশোদ্ভূত দেশটি নাগরিক আরডেম প্যাটাপুটেন।

মানবদেহে স্পর্শ বা উষ্ণতার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়া, উপলব্ধি করা ও শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভূমিকা রাখা রিসেপ্টর শনাক্ত করেন তারা।

সোমবার (৪ অক্টোবর) সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক অনুষ্ঠানে নোবেল কমিটি বিজয়ী হিসেবে জুলিয়াস ও প্যাটাপুটেনের নাম ঘোষণা করে।

ডেভিড জুলিয়াস সান ফ্রান্সিসকোয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। আর আরডেম প্যাটাপুটেন কাজ করেন ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলা হাওয়ার্ডের মেডিকেল স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। নোবেল পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার দুজন সমানভাবে ভাগ করে নেবেন।

নোবেল কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মানবদেহের যে নার্ভ সেন্সরের কারণে আমাদের ত্বক তাপ অনুভব করতে পারে, সেই সেন্সরকে শনাক্ত করতে অবদান রেখেছেন জুলিয়াস। আর প্যাটাপুটেন মানবদেহের কোষে আলাদা চাপ-সংবেদনশীল সেন্সর খুঁজে পেয়েছেন। এই সেন্সরের কারণে দেহ কোনো উদ্দীপনায় সাড়া দিতে পারে।

নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে এই আবিষ্কারকে যুগান্তকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এই বছরের নোবেল পুরস্কারে বিজয়ীদের আবিষ্কারের কারণে আমরা এটা জানতে পেরেছি যে কীভাবে তাপ, ঠান্ডা এবং যান্ত্রিক শক্তি আমাদের অনুভূতিকে নাড়া দেয় এবং আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি ও বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে ক্রনিক ব্যথাসহ আরও নানা ধরনের রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি বের করার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে আরও অনেক তাপ-সেন্সরও আবিষ্কার করা হচ্ছে। জুলিয়াস এবং প্যাটাপুটেন ঠান্ডা শনাক্ত করার সেন্সরও খুঁজে পেয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের দি ফিজিওলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডেভিড প্যাটারসন বলেন, ‘ক্রনিক ব্যথা এবং অন্যান্য অবস্থা চিকিৎসায় এ আবিষ্কার অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ আমরা কীভাবে তাপমাত্রা, স্পর্শ ও চলাফেরার বিষয়গুলো অনুভব করি, তা নিয়ে মানষের দীর্ঘদিনের জিজ্ঞাসা ছিল।’

সিএনএন বলছে, বিস্ময়কর হলেও সত্য জুলিয়াস ও প্যাটাপুটেন তাদের গবেষণার শুরু করেন কাঁচা মরিচ দেখে। আরও বিশদভাবে বললে, কাঁচা মরিচের উপাদান ক্যাপসাইনিন খাওয়ার সময় এটি যে তীব্র জ্বলন্ত সংবেদন তৈরি করে, তা থেকে।

নোবেল কমিটির মহাসচিব থমাস পার্লম্যান বলেছেন, ‘এ আবিষ্কার প্রকৃতির গোপন রহস্য উন্মোচন করেছে। আণবিক স্তরে কীভাবে উদ্দীপনাগুলো স্নায়ু সংকেতে রূপান্তরিত হয়, তা ব্যাখ্যা করছে এটি। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর আবিষ্কার।’

কাঁচা মরিচের অনুপ্রেরণা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি খুবই চতুর বিষয়। কারণ কাঁচা মরিচ অথবা ক্যাপসাইনিনের ব্যবহার আগে থেকেই স্নায়ু বা ব্যথা উপশমে পরিচিত ছিল। আর এটি সত্যিই কীভাবে ঘটে তার জন্য আণবিক প্রক্রিয়াগুলো আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে তারা নতুন দিশা দিলেন।’

গত বছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী হার্ভে জে আল্টার ও চার্লস এম রাইস এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল হাউটন। হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস আবিষ্কার এবং এর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তারা এ পুরস্কারে ভূষিত হন।


আরও দেখুন: