নিরাময় অযোগ্য রোগ: প্রয়োজন হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবার প্রটোকল
বিএসএমএমইউ’র হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা
দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ নিরাময় অযোগ্য বা দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন হয়। এ সেবা আরও সহজলভ্য ও বিস্তৃত করতে প্রয়োজন এ সংক্রান্ত প্রটোকল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ‘নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার: বাংলাদেশে সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণায় এ সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশ্ব প্রবীণ দিবস (১ অক্টোবর) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার তিনটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বিএসএমএমইউ’র পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের গবেষণাগুলো হলো— ‘বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণ’, ‘গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাত ব্যথার ব্যাপকতা’ ও ‘নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার: বাংলাদেশে সম্ভাবনা’।
বিএসএমএমইউ’র সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া হাসিনের গবেষক টিম পরিচালিত ‘নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার: বাংলাদেশে সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আত্মিক সেবা প্রদানের একটি সার্বিক প্রচেষ্টা ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ বা প্রশমন সেবা। এটি গুরুতর বা নিরাময় অযোগ্য অসুস্থ রোগীদের জন্যে এক ধরণের বিশেষ সেবা।
গত ২০০৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, হোমকেয়ার এবং কমিউনিটি ভিত্তিক তিন ধরনের প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে আসছে।
এরপর ২০০৮ থেকে হোম সেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদান করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার দল ডাক্তার এবং নার্সদের সহায়তায় বিএসএমএমইউ’র ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নিরাময় অযোগ্য রোগীদের বাড়িতে গিয়ে হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
এই গবেষণাটি মিক্সড মেথড পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়েছে। ১০৪ জন রোগীর মেডিকেল রেকর্ড পর্যালোচনা করে এবং ২৪ জন প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমের সদস্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের সেবা পরিচর্যাকারীদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এটা সম্পন্ন করা হয়।
গবেষাণার ফলাফলে বলা হয়, রোগীদের অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৫০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিল। ৮৭ শতাংশ রোগী মহিলা। ৮৩ শতাংশ রোগী বিবাহিত। ৬৬ শতাংশ রোগী গৃহিনী/গৃহকর্তা। ৫২ শতাংশ রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচ নিজের এবং বন্ধুদের ও পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে অর্থায়ন করা হয়।
রোগীদের রোগের ধরন এবং আনুসাঙ্গিক বিষয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ এরও বেশি ক্যান্সার রোগী। ৬২ শতাংশ রোগী ডাক্তার/হাসপাতাল দ্বারা রেফার হয়ে হোম কেয়ারের জন্যে এসেছেন। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে লিম্ফিডিমা কেয়ার প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ রোগীরই প্রধান লক্ষণ ছিল ব্যথা। রোগীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা ও দুশ্চিন্তার লক্ষণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ১৮ শতাংশ রোগী মনোসামাজিক এবং আধ্যাত্মিক সেবা পেয়েছেন।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবার জন্য নির্দিষ্ট প্রোটোকল প্রয়োজন। চিকিৎসকদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সেবা সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন। সেবাপ্রদানকারীদের জন্যে সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা দরকার।
এছাড়া জনসচেতনতা এবং প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি মান ও পরিধি বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত মানবসম্পদ এবং উপকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এই বিশেষ চিকিৎসা সেবায়।