যক্ষ্মা নির্মূলে যেভাবে কাজ করবে শ্যামলীর টিবি ল্যাব
ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা শনাক্ত এবং নুতন ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণায় চালু হয়েছে ইন্টিগ্রেট টিবি সার্ভিস সেন্টার
যক্ষ্মায় দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে বিশ্বে প্রায় ১ কোটি মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং এদের মধ্যে ১৫ লাখের মৃত্যু হয়।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে বাংলাদেশে জন্মের পর শিশুকে বিসিজি টিকা দেয়া হয়। কেউ আক্রান্ত হলে শনাক্তের পর রোগের ধরন, মাত্রা ও বয়স অনুসারে ওষুধের কোর্স শেষ করতে হয়। যক্ষ্মা নিরাময়ে এখন পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকেই কার্যকর মনে করা হয়। সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস চলে এ চিকিৎসা।
তবে সম্প্রতি দেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার ধরন শনাক্ত হয়েছে। ফলে যক্ষ্মার প্রচলিত অনেক ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সারা দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ২৪৭টি ল্যাবে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্ত হলে ওষুধ দেয়া হয়। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭০টি জিন এক্সপার্ট ল্যাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করা হচ্ছে।
তবে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা শনাক্ত এবং নুতন ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার জন্য ঢাকার শ্যামলীতে ২৫০ শয্যার টিবি হাসতালে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) চালু হয়েছে ইন্টিগ্রেট টিবি সার্ভিস সেন্টার ও টিবি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি। এর মাধ্যমে সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় টিবি রোগী শনাক্ত ও ব্যবস্থাপনা করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতায় চালু হওয়া এ ল্যাবের কার্যকারিতা নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমবিডিসি ডিরেক্টর ও লাইন ডিরেক্টর টিবি ল্যাপ্রোসি অধ্যপক ডা. শামিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত টিবিকে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা বিবেচনা করা হয়। কিছু রোগী আসেন, যাদের সাধারণ যক্ষ্মা; আবার কিছু রোগী আসেন, যারা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এ রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।’
সারা দেশের টিবি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ কোটি মানুষ শনাক্ত হয়েছে, যাদের পরিবারের কোনো সদস্য বা নিজেদের টিবি ছিল। তাদের মধ্যে ২৫ থেকে ২৭ লাখ লোককে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ৩ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘জিন এক্সপার্ট ল্যাবে সাধারণ যক্ষ্মার সঙ্গে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাও শনাক্ত করা যায়। এসব রোগীকে ডটস প্রজেক্টের মাধ্যমে ৬ মাসের চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা নির্মূলে কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, সেটি নির্ণয় করতেই এ রেফারেন্স ল্যাব। এর মাধ্যমে কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না বা কোনো অঙ্গহানির সম্ভাবনা আছে কি না সেটিও গবেষণা করা হবে। এর বাইরেও অনেকগুলো উচ্চতর পরীক্ষা দরকার হয়, সেগুলো এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ল্যাবরেটরিতে ব্যাকটেরিয়া কালচার করা হবে। অর্থাৎ এখানে ব্যাকটেরিয়াকে বড় হতে দেয়া হবে এবং দেখা হবে কোন ওষুধ এই ব্যকটেরিয়ার বিপরীতে কাজ বেশি করে। এটার জন্য বিএসল টু প্লাস ল্যাবরেটরি দরকার হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এছাড়া এলপিএ বা লাইভ প্রভ অ্যাসেও এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি। এতে কালচার গবেষণার পরের ধাপ। এখানে কোন ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হয় কি না সেটি শনাক্ত করা হয়।’
যক্ষ্মার প্রাথমিক লক্ষণ যেমন, জ্বর, কাশির সাথে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা হয়ে থাকে। যক্ষ্মার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান এ বিশেষজ্ঞ।