‘দেশে ৭০ শতাংশ মানুষের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে’

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2021-09-17 16:08:20
‘দেশে ৭০ শতাংশ মানুষের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে’

সংক্রমণ কমার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া

দেশে করোনার সংক্রমণের বিরুদ্ধে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী বাংলাদেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এক গণমাধ্যম সংলাপে এ কথা বলেন তিনি। র‍্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন তার সঙ্গে এ সংলাপের আয়োজন করে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর-বি) ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘দেশে এখন করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এ সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে আবারও কমছে। কমার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অ্যান্টিবডি। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আমাদের দেশেই ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ কিছুটা কম। তবুও এটা নিয়ে এখনই উপসংহারে আসার মতো কিছু বলা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতাও বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি টিকার চলমান উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়ার অভ্যাস অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।’

গণমাধ্যম সংলাপে জাপানের এনএইচকের সাংবাদিক আইকো ডোডেনের প্রশ্ন ছিল, সারা বিশ্বে টিকা নিয়ে এক অসাম্য পরিস্থিতি চলছে। এর কারণ অর্থনৈতিক না রাজনৈতিক? এটি ধনী রাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের নমুনা কি না?

জবাবে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘হয়তো এসব কারণে কাজ করছে। কিন্তু এর বিপরীতে বিশ্বে মানবিকতারও অনেক উদাহরণ আছে। যেমন, আমরা কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে টিকা পাচ্ছি। এটা একটা অনন্য উদ্যোগ। আমরা কভিড-১৯-সংক্রান্ত গবেষণার কাজে পশ্চিমা অনেক দেশ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। তাই পুরো বিশ্ব বন্ধুহীন হয়ে গেছে, এমনটা ভাবা চলবে না।’

পুরো বিশ্বেই নারীর লড়াই অনেক কঠিন
গণমাধ্যম সংলাপে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘নারীদের লড়াই বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে শুধু নয়, সারা বিশ্বেই তা রয়েছে। এ লড়াই অনেক কঠিন। এতে ধৈর্য, সহনশীলতা, দায়িত্বশীলতা দরকার। দায়িত্ব শুধু কাজের ক্ষেত্রে নয়, পরিবারের সব সদস্যের প্রতিও তা পালন করা দরকার। তবে লড়াইটা বেশ কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে একজন বাংলাদেশি। মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতায় আমি বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছি। পেয়েছি স্বামীসহ পরিবারের সবার অকুণ্ঠ সহযোগিতা। আমার প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর-বি’র সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতাও আমি পেয়েছি।’

ফেরদৌসী কাদরী যেদিন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান, ঠিক তার পরের দিন তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ সালেহীন কাদরী মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় স্ত্রীর ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাওয়ার খবর বাংলাদেশের প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানশিক্ষক আর জেনে যেতে পারেননি।

স্বামীর বিষয়ে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বিজ্ঞানচর্চার কঠিন পথে তিনি তার স্বামীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

নতুন প্রজন্মের নারী, যারা বিজ্ঞানের কাজে আসতে চান, তাদের জন্য বিশেষ কোনো বার্তা আছে কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই বার্তা দিতে চাই। তা হলো, বিজ্ঞানের অর্জনটা দীর্ঘমেয়াদি। এখন অনেকেই বাণিজ্য শাখায় লেখাপড়া করে অর্থ উপার্জন করতে চায়। এটা অবশ্য দোষের কিছু নয়। অনেকের পারিবারিক দায়বদ্ধতা থাকে। সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের সক্ষমতা অনুসন্ধান করা। তারা তাদের পারিবারিক দায়িত্ব অবশ্যই সামলাবেন। কিন্তু নিজেদের পেশার প্রতিও যত্নবান হবেন। বড় জায়গায় যেতে হলে ৯টা থেকে ৫টা অফিসের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলে না।’

গত ৩১ আগস্ট ‘এশিয়ার নোবেল’ হিসেবে পরিচিত ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। ফেরদৌসী কাদরীসহ এ পর্যন্ত ১২ ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন।

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ম্যাগসাইসাই ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তার নামে ১৯৫৮ সাল থেকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। ৩১ আগস্ট র‍্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের জন্মদিনে প্রতি বছর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এ পুরস্কার দেয়া হয়।

কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা এবং সাশ্রয়ী দামে সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন ফেরদৌসী কাদরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।


আরও দেখুন: