আশাহত রামেকের ৭ করোনা যোদ্ধা
যখন শত শত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ, তখন সদ্য পাস করা এই সাত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে আসেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) আরটি পিসিআর কোভিড-১৯ ল্যাবে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দেড় বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিনা পয়সায় কাজ করে যাচ্ছেন একদল তরুণ টেকনোলজিস্ট। কিন্তু সরকার কিংবা কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ তারা।
গত বছরের জুলাইতে রামেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে মাত্র দুজন মলিকুলার বায়োলজিস্ট আর পাঁচজন টেকনোলজিস্ট নিয়ে শত শত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ। তখন সদ্য পাস করা সাত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে আসেন।
এই সাত করোনা যোদ্ধা হলেন- নওগাঁ জেলার মান্দার ফয়েজ উদ্দীনের ছেলে ইসমাইল হোসেন, রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার কফিল উদ্দিন মৃধার মেয়ে শিরিন সুলতানা, দাসপুকুরের আব্দুস কুদ্দুসের মেয়ে শারমিন আক্তার, নওগাঁ জেলার পোরশার ফজলুল হকের ছেলে গোলাম মাওলা, নগরীর কোর্ট বুলনপুরের আইজুদ্দিনের মেয়ে মোসা. আসিয়া খাতুন, বগুড়া জেলার শেরপুরের সুজাউদ্দৌলার ছেলে মিল্লাত হুসাইন ও রাজশাহী জেলার দূর্গাপুরের মোস্তফা জামালের মেয়ে মমতাজ খাতুন।
একই শর্তে কাজ করা একই যোগ্যতা সম্পন্ন কিছু প্রতিষ্ঠানের করোনা স্বেচ্ছাসেবক টেকনোলজিস্টদের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা-২০১৮’র ৩(৮) অনুচ্ছেদের আলোকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে সুযোগ বঞ্চিত হয়ে তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
তারা বলেন, হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জামিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য সকল যোগ্যতার নির্বাচন ভিত্তিতে স্ব উদ্যেগে কাজ করার আদেশক্রমে স্মারক নম্বর রামেকহা/প্রশা ২০২০ ৩৩০৩(১৭) এর ভিত্তিতে জুন ২০২০ থেকে প্যাথলজি ল্যাব/ ইনচার্জের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এই স্বেচ্ছাসেকরা বলেন, ‘যদিও আমাদের বলা হয়েছিল- হাসপাতালের ফান্ড থেকে মাসিক সম্মানী এবং সরকারিভাবে নিয়োগের কোনো সুযোগ আসলে আমরা তা অবশ্যই পাবো। কিন্তু গত ১৪ মাস যাবত আমরা এমন কোনো সুযোগ পাইনি।’
তারা বলেন, ‘এ অবস্থায় বাইরে থাকা-খাওয়া নিয়ে আমরা আর্থিকভাবে সংকটে আছি জানালে বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী স্যার মানবিক দিক বিবেচনা করে কিছু সম্মানীর ব্যবস্থা করেন আমাদের জন্য, যা থাকা-খাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।’
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তররের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/হাসপাতালে করোনাজনিত কারণে কর্মরত ২০২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে অনুমোদন করে ৭০ জনকে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এই সাতজনের তালিকা একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
রামেক হাসপাতালের কোভিড-১৯ ল্যাব ইনচার্জ ডা. মাহমুদা নাজনীন মমো বলেন, অনুদানের টাকা থেকে ওদের সম্মানিভাতা মাসিক ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। মাঝে অনিয়মিত ছিল। এপ্রিলে ডিউ বিল ক্লিয়ার করা হয়েছে। জুলাই পর্যন্ত আপডেট করা আছে।
তিনি বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত ওরা অনেক পরিশ্রম করছে। এর মধ্যে একেকজনের তিন-চারবার করোনা পজিটিভ হয়েছে। বুঝতেই পারছেন তাদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা। এর মধ্যে একজন মেয়ে প্রেগন্যান্ট, তারপরেও কাজ করছেন।
এই বিষয়ে জানতে রামেক হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে, রামেক হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে অল্প কিছু হলেও সম্মানী তাদের পাওয়ার কথা। আমি ঢাকায় আছি, রাজশাহীতে ফিরে এসে বিষয়টি জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
দেশের অন্য মেডিকেলে একই শর্তে কাজ করা অনেকের স্থায়ী চাকরি হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার জানা নেই। এ রকম হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি জানতাম।’