চিকিৎসকদের আয়কর বিবরণী নিয়ে এনবিআরকে দুদকের চিঠি
দুর্নীতি দমন কমিশন
চিকিৎসকদের আয়কর বিবরণী সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করার তাগিদ দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। একই সঙ্গে আইনজীবীদের আয়কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করে ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এমন চিকিৎসক ও আইনজীবীদের চিহ্নিত করতে কাজ করা হচ্ছে যাদের টিআইএন নেই, কিন্তু ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা বা তার বেশি ফি নেন। এছাড়া যেসব ভারতীয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা ঢাকায় অনুশীলন করছেন তাদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
সম্প্রতি দেয়া ওই চিঠিতে সংস্থাটি এনবিআরকে চিকিৎসক ও আইনজীবীদের এছাড়া তাদের আয়কর বিবরণীতে কর ফাঁকির তথ্য থাকলে তা বের করে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের অধীনে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক বণিকবার্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষায়িত চিকিৎসক ও আইনজীবীরা তাদের রোগী বা ক্লায়েন্টদের সেবা দেয়ার বিনিময়ে পাওয়া অর্থের বিপরীতে চালান বা রসিদ বাধ্যতামূলক করেছেন কিনা তা ওই চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছে দুদক।
দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান জানিয়েছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবেন। তবে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা চিঠি পাঠানোর বিষয়টি বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আইনজীবীদের কর ফাঁকির বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এ দুই পেশাজীবীদের একটি বড় অংশই প্রকৃত আয় গোপন করে কর ফাঁকি দেন। এছাড়া তাদের জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য সঞ্চয়ের তথ্যও গোপন করেন। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়টিই দুদকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে চিকিৎসক ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের প্রকৃত আয় জানতে একটি ডাটাবেজ তৈরি করছে এনবিআর। এছাড়া রাজধানীতে যেসব চিকিৎসক ও আইনজীবীর চেম্বার রয়েছে, তাদের জমা দেয়া আয়কর বিবরণীর সঙ্গে প্রকৃত আয় মিলিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের চেম্বারে গিয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চিকিৎসক ও আইনজীবীদের ডাটাবেজ বা প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পেতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে চায় এনবিআর।
জানা গেছে, দেশে প্রায় ৫২ লাখ মানুষের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে। তবে এদের মধ্যে বছর শেষে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ২০-২১ লাখ। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ রিটার্ন দেয়, কিন্তু কর দেয় না। সেই হিসাবে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ কর দেয়। আবার এদের মধ্যেও অনেকের বিরুদ্ধে প্রকৃত আয় গোপন করে আয়কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আইনজীবীরা প্রকৃত আয়কর দিলে রাষ্ট্রের আয় অনেক বাড়বে। চিকিৎসকরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ নিজস্ব ক্লিনিক বা চেম্বারে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। নির্ধারিত বেতন ছাড়াও একজন চিকিৎসকের বহুমুখী আয় ও কমিশন আছে। কিন্তু এসব আয়ের কিছুই কর নথিতে উল্লেখ থাকে না। তারা প্রতি বছর যে আয়কর রিটার্ন জমা দেন তাতে আয়ের প্রকৃত তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কম আয় প্রদর্শন করে কর ফাঁকির আশ্রয় নেন প্রায় সবাই। আইনজীবীদেরও প্রকৃত আয় গোপনের অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক চিকিৎসক ও আইনজীবী রয়েছেন যারা প্রকৃত আয় প্রদর্শন করে কর দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা হাতেগোনা।
এর আগে ২০১৮ সালে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে ও দুর্নীতির বিভিন্ন উৎস চিহ্নিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি পাঠায় দুদক। সেই চিঠিতে সংস্থাটি জানিয়েছিল, কর ফাঁকি ও মওকুফ বন্ধ করতে পারলে কর-জিডিপি অনুপাত আরো ৫ শতাংশ বাড়ানো যেত, যা টাকার অংকে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এজন্য করদাতাদের সেবা ও আয়কর দিতে উৎসাহিত করার সুপারিশ উঠে এসেছিল চিঠিতে। একই সঙ্গে আয়কর বিভাগের কিছু কর্মকর্তা নিয়ম-বহির্ভূতভাবে আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তিদের পরামর্শক হয়ে কাজ করে কর ফাঁকি দেয়ার বিভিন্ন পথ দেখান। ফলে অনেকেই কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হন। এ বিষয়টিতেও সে সময় নজরদারি বাড়ানোর জন্য দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছিল।