দ্রুত জ্বর কমাতে ক্ষতিকর ব্যথানাশক নয়: ডা. রোবেদ আমিন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন
দ্রুত জ্বর কমাতে ক্ষতিকর ব্যথানাশক এনএসআইডি ওষুধ প্রয়োগ না করার অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কোভিড-১৯ প্যানডেমিক ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ‘পিটফলস ইন ডেঙ্গু অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে স্লাইড শো-তে তিনি একথা বলেন।
এতে তিনি ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গগুলো চিহ্নিত করার বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
তিনি বলেন, কোনো দেশে যখন ডেঙ্গু প্রবেশ করে, তখন সেটি আর বের হতে চায় না। এই অবস্থা নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমরা গত ২১ বছর ডেঙ্গুর ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জেনেছি। ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টে নিয়ে জাতীয় গাইডলাইনের চতুর্থ সংস্করণ হয়েছে। এই সংস্করণের ওপর একটি রিভিশন হয়েছে ২০১৮ সালে।
ড. রোবেদ আমিন বলেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়ে গেলে আমরা এটি হ্যান্ডবুক আকারে বের করি। এর পরেও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় কিছু দুর্বলতা রয়েই গেছে। আমরা কীভাবে সেটি মোকাবিলা করবো এই বিষয় নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
তিনি বলেন, মহামারী চলাকালে জ্বর একটি উপসর্গ, কিন্তু যখন কোনো একটি দেশ ডেঙ্গুর মতো কোনো অ্যাপিডেমিক চলে, তখন সব জ্বরকেই কোভিড-১৯ বলা যাবে না। আমাদের চিকিৎসকের জন্যও এটি অনেক সময় কঠিন হয়েছে। আসেলেই সেই জ্বর ডেঙ্গু নাকি কোভিড-১৯।
একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, কোভিড-১৯ এবং ডেঙ্গু দুটিই একই সঙ্গে হতে পারে। এমনও রোগী আমারা দেখেছি যার কোভিড-১৯ এর সঙ্গে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হয়েছে এবং তিনি গর্ভবতীও। এমন তিনটি সিভিআর কেস নিয়ে কিভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিবে সেটিই বড় ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার প্রথম কথা থাকবে সব কিছু বইয়ের মধ্যে থাকতে হবে বিষয়টি এমন নয়। প্রথমে মনে রাখতে হবে আমাদের ডেঙ্গুর প্রথম দিনেই অসম্ভব জ্বর আসতে পারে। ১০৪ বা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর নিয়ে আসছে কি না সেটি মাথায় রাখেতে হবে। এছড়া গায়ে র্যাশ আছে কিনা সেটিও মাথায় রখতে হবে যা করোনার ক্ষেত্রে হবে না। কোভিড-১৯ জ্বর থাকতে পারে কিন্তু সেটি অনেক মাত্রায় হবে না।
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, গলাব্যথা বা নাক বন্ধ হয়ে গেলে শ্বাসকষ্ট হলে সেটি কোভিডও হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে বুঝতে হবে দুই কারণেই ডায়রিয়া হতে পারে। তবে পেটব্যথার সঙ্গে ডায়রিয়া ও বমি হলে মনে করতে হবে সেটি ডেঙ্গু। এজন্য আমরা বলতে পারি এক দিনের একটি ডায়াগনোসিসই অসংখ্য রোগীর সুস্থ হওয়ার মাধ্যম হতে পারে।
এবছর ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রায় ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু। দেরি করে ফেললে শিশুদের একাধিক অঙ্গ অকার্যকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের একটি প্রবণতা আছে- জ্বর হলে কীভাবে সেটিকে কমিয়ে আনা যায়। এজন্য অনেকগুলো ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। এর কারণ হচ্ছে আমরা অধিকাংশ সময়ই দ্রুত ফলাফল চাই।
তিনি বলেন, এজন্য চিকিৎসকদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ থাকবে- আমরা যেন সহজেই ব্যথানাশক এনএসআইডি ব্যবহার না করি।
অনুষ্ঠানে ‘চ্যালেঞ্জ অব কোভিড-১৯ প্যানডামিক অ্যান্ড ডেঙ্গু’ শীর্ষক গাইডলাইন উপস্থান করেন বাংলাদেশে সোসাইটি অব মেডিসিনের সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. আহমদুল কবির। অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।