করোনাকালে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ

মোকাররম হোসাইন
2021-08-02 16:32:01
করোনাকালে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ

প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়।

প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য—‘প্রটেক্ট ব্রেস্টফিডিং, এ শেয়ারড রেসপনসিবিলিটি।’ ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডাব্লিউবিটিআই) দিবসটি পালনে বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২১-এর উদ্দেশ্য হলো—মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা; মায়ের দুধ খাওয়ানোকে জনস্বাস্থ্য সেবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোচ্চ সফলতার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা।

করোনাকালে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ এবারের সপ্তাহটিতে। সে জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণের কথা বলা হয়েছে তা হলো—

১। মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ করা।

২। শিশুর খাবার ও পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রমের পরিধি ও অর্থের বরাদ্দ বৃদ্ধি।

৩। মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য কম্পানিগুলোর ডিজিটাল বাজারজাতকরণ কৌশল চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ।

৪। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ ও মাতৃত্ব সুরক্ষা (ছুটি, বেতন-ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ভাতা প্রদান) নিশ্চিত করা।

৫। মাতৃদুগ্ধদানের সুরক্ষা, প্রচার ও সমর্থনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ।

৬। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর কাউন্সেলিং ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতকরণ।

পুষ্টিবিদদের মতে, যেসব শিশুরা নিয়ম মেনে অর্থাৎ ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ আর দুই বছর পর্যন্ত বাড়তি খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ পান করে তাদের মৃত্যুহার যারা বুকের দুধ পান করে না সেই শিশুদের তুলনায় ১৪ গুণ কম।

এছাড়াও ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন এর তথ্য মতে শিশুকে জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে যদি বুকের দুধ পান করানো হয় সেক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ৩১ শতাংশ কমে যায়।

মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা নিয়ে পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, ‘‘মায়ের বুকের দুধ বিভিন্ন এন্টিবডিতে ভরা যা শিশুকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে না বা সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে মায়ের বুকের দুধ পান করে না তাদের নিউমোনিয়া ডায়রিয়া ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।’’

তিনি বলেন, ‘‘যেসব শিশুর জন্ম পরবর্তী ছয় মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং (শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করবে এমনকি একফোঁটা পানিও পান করবে না) তাদের বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগ, কণ্ঠনালী ও কানের ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগের আশংকা কমে যায়।’’

মায়ের দুধে যে উপাদান রয়েছে তাতে শিশুর ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়ক হয়। এছাড়াও জীবনের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য ও কিছু কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে যে সকল শিশুর জন্মের পর সঠিকভাবে নিয়ম মেনে মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের। আর তাদের জীবনে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে হাড় ও অস্থির গঠন মজবুত থাকে।

বাংলাদেশে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর সপ্তাহটি পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচি মাসব্যাপী পালিত হবে।


আরও দেখুন: