‘আমরা কঠিন সময় পার করছি’
করোনা রোগী অন্যদের মতো নয়। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়
খুলনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রত্যেক দিনই রোগী বাড়ছে। অনেক চিকিৎসক সেবা দিতে গিয়ে নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে ফের কর্মস্থলে এসে আবারো আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরও নিজের জীবন বিপন্ন করে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৩২ জনের। আর মারা গেছে ৫১ জন।
এমন প্রেক্ষাপটে ডক্টর টিভি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসানের কাছে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা কঠিন সময় পার করছি। তারপরও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার, নার্স ও কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। এখানে এমনও রয়েছেন যারা দ্বিতীয়বারের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়েও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে জনগণের কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা, আমাদের উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকবেন। এতেই আমরা খুশি থাকব।’
ডা. রবিউল হাসান বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ শতাংশ। খুলনা সদর হাসপাতালে গত এক মাসের চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। করোনা পরিস্থিতি খারাপ যদি হয়ে যায়, তাহলে আমরা খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সব সময় প্রস্তুত।’
তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। ১৩০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে প্রত্যেক দিন দুই শতাধিক রোগী হচ্ছে। আমরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। সক্ষমতার জায়গাটা হচ্ছে আমরা ২০০ রোগীকে করোনা চিকিৎসা দিতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের ধারণক্ষমতার চেয়ে রোগী অনেক গুণ বেশি। এ সব রোগীর একমাত্র চিকিৎসা অক্সিজেন। অক্সিজেন লাইনগুলো আগে করা ছিল না। আমাদের হাসপাতালে ২০০ থেকে আমরা ২৫০ জনকে চিকিৎসা দিতে পারব। করোনা রোগীরা অন্যান্যদের মতো নয়। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘অক্সিজেন মজুদ করার বিষয় নয়। আমাদে প্রত্যকটা হাসপাতে যে ট্যাঙ্ক আছে, সেগুলো ৭ দিন পরপর রিফিল করতে হয়। আপাতত অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি হলে সিলিন্ডার দিয়ে পূরণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো টিকাই শতভাগ কার্যকর নয়। দেশে ওষুধ প্রশাসন যে টিকাগুলো অনুমোদন দিয়েছে, এগুলো অনেক ক্ষেত্রে ৯৯ ভাগের মতো কার্যকর। টিকা নেয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হয়। তবে টিকা নিলে যেটা হয়, তাদের কারও অবস্থা গুরুতর হবে না। টিকা নেয়া কারও মৃত্যু হয়নি। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে যারা টিকা নেয়ার যোগ্য, তাদের টিকা নেয়া উচিত। অদৃশ্য শক্তির সাথে আমরা যুদ্ধ করছি। এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’