ঢামেক চিকিৎসকদের চেষ্টায় ‘অলৌকিক জীবন’ ছুরিকাহত সুমনের

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2021-07-04 17:54:36
ঢামেক চিকিৎসকদের চেষ্টায় ‘অলৌকিক জীবন’ ছুরিকাহত সুমনের

মুহূর্তের দুর্ঘটনায় বিপন্ন হয়ে যায় একটা জীবন, এলোমেলো হয়ে যায় একটা পরিবার। এই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রতিটা সেকেন্ড অমূল্য।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ। সময়টা রাত ১১টা। একের পর এক রোগী আসছে। একেক জনের একেক রকম সমস্যা। কারো মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে, কারো পা ভেঙে গেছে, কারোও জ্বর, কেউ এসেছে পেটে ব্যথা নিয়ে।

হঠাৎ ডান বুকে ছুরিকাঘাত নিয়ে আসে ১৫ বছরের কিশোর সুমন। রক্তে ভেসে গেছে পুরো শরীর। কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে আনেন তাকে। তাদের শরীরও রক্তে ভিজে গেছে।

কথা বলে জানা গেছে, ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে চাকু বসিয়ে দিয়েছে। পথেই পড়ে ছিল। কয়েকজন পথচারী মিলে আনেন ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে।

চিকিৎসক দ্রুত দেখেই বললেন, থোরাসিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক লাগবে। থোরাসিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা দ্রুত রোগীকে পরীক্ষা করেন।

থোরাসিক সার্জারি বিভাগের ওই টিমের নেতৃত্ব দেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেরাজুস সালেকিন। তিনি জানান, ঘটনার দিন থোরাসিক সার্জারি বিভাগে এ রোগীর খবর নিয়ে জরুরি কল আসে। ইতোমধ্যে তার শরীর থেকে বেরিয়ে গেছে প্রচুর রক্ত। ছেলেটি একেবারেই ফ্যাকাশে, ডাক্তারি ভাষায়- paper white।

পরীক্ষা করে দেখা যায়, চাকুর আঘাতে সুমনের ডান ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষত হয়েছে। বেশ খানিকটা ফুটো হয়ে যায়। রক্তনালী কেটে যায়, ডায়াফ্রাম ছিঁড়ে যায়।

ওই কিশোরকে তাকে যখন অপারেশন রুমে আনা হয়, তখন আক্ষরিক অর্থেই ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত জোগাড় করে রাতে অপারেশন শুরু করেন চিকিৎসক টিম। অপারেশন শেষ হয় ভোর ৪টায়।

ডা. সেরাজুস সালেকিন বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে ছেলেটার সব রক্তপাত বন্ধ করা হয়, আর ফুটো হয়ে যাওয়া ফুসফুস সেলাই করা হয়। পরবর্তীতে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন তার জ্ঞান ফিরে আসে। সে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ।’

এই টিমে ডা. সিরাজুস সালেকিনের সঙ্গে ছিলেন ডা. দেবাশীষ, ডা. মোরসালিন ও ডা. জাফর। টিমকে পুরোটা সময় দিক নিদের্শনা দেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম।

ডা. সালেকিন বলেন, মুহূর্তের দুর্ঘটনায় বিপন্ন হয়ে যায় একটা জীবন, এলোমেলো হয়ে যায় একটা পরিবার। এই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রতিটা সেকেন্ড অমূল্য।

তিনি বলেন, ‘সময়মতো জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। আর সবচেয়ে বড় কথা যাকে আল্লাহ বাঁচায়, তার ক্ষতি করতে পারে না কেউ।’


আরও দেখুন: